চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা রোহিঙ্গাদের

রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়
ছবি: প্রথম আলো

রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে।

দলটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বোট ক্লাব থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। দলটিতে নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা রয়েছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে এই রোহিঙ্গারা যাত্রা করেছে। আজ দুপুরের দিকে তাদের ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম কে জামান শামীম প্রথম আলোকে বলেন, নৌবাহিনীর ছয়টি এলসিইউতে ও সেনাবাহিনীর জাহাজ শক্তি সঞ্চারে করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নৌবাহিনীর জাহাজ শাহ মখদুম ও শাহ পরানে করে রোহিঙ্গাদের মালপত্র সকালেই ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রথম দলে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম কে জামান শামীম জানান, রোহিঙ্গাদের এই বহরের সঙ্গে নৌবাহিনীর দুটি ও কোস্ট গার্ডের দুটি জাহাজ রয়েছে। এ ছাড়া আছে দুটি হাইস্পিড বোট, দুটি ডিফেন্ডার বোট ও চারটি কান্ট্রি বোট।

ভাসানচরে যাত্রা শুরুর অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তারা বলে, তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে যাচ্ছে। তাদের আশা, সেখানে তারা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে।

বোট ক্লাব থেকে যাত্রা করে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের অংশ হিসেবে আজ প্রথম দফায় এই রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়ায় জেগে ওঠা দ্বীপ ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের বহনকারী ৩৯টি বাস উখিয়া কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা করে। ১ হাজার ৬৩৫ জন রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ রাতে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। পতেঙ্গা বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠ ও বোট ক্লাব এবং এর আশপাশের এলাকায় অস্থায়ী ট্রানজিট শিবিরে তাদের রাখা হয়।

দুপুরের দিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা
ছবি: প্রথম আলো

সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। প্রথম দফায় যেসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হবে, তাদের জন্য খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ অন্তত এক মাসের রসদ দ্বীপটিতে মজুত রাখা হয়েছে।

ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জন্য এক বছরের রসদ মজুত করা হবে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য নানা ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি ২২টি সাহায্য সংস্থাকে যুক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই সংস্থাগুলোর শতাধিক কর্মী এখন ভাসানচরে অবস্থান করছেন।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছাতেই ভাসানচরে যাচ্ছেন
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দফায় ভাসানচরে শরণার্থী স্থানান্তরিত হলে অন্যরাও সেখানে যেতে উৎসাহিত হবে।

রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই স্থানান্তর বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কাউকে জোর করে ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে না। যারা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে, শুধু তাদেরই স্থানান্তর করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ
ছবি: প্রথম আলো