চট্টগ্রামে করোনার ‘ডেলটা’ ধরন

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে করোনার ‘ডেলটা’ ধরনে সংক্রমিত রোগীর সন্ধান পেয়েছেন গবেষকেরা। ৪২ জন রোগীর করোনার নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।

করোনার নমুনা বিশ্লেষণবিষয়ক এই গবেষণাটি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ১৩ জন গবেষক।

গবেষকেরা চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতাল ও গবেষণাগার থেকে গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ৪২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেন। নমুনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪২ জনের মধ্যে দুজন ভারতে পাওয়া করোনার ‘ডেলটা’ ধরনে আক্রান্ত। তিনজন আক্রান্ত নাইজেরিয়ার ‘ইটা’ ধরনে। চারজন যুক্তরাজ্যের ‘আলফা’ ধরনে আক্রান্ত। বাকি ৩৩ জন দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বিটা’ ধরনে আক্রান্ত।

গবেষকেরা জানান, গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, সিভাসুসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। ৪২ জনের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তির বয়স দুই মাস। সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তির বয়স ৭৮ বছর। অর্থাৎ, শিশু, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ—সব বয়সী রোগীর নমুনা গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গবেষকেরা জানান, গবেষণায় যে দুটি নমুনায় ভারতীয় ডেলটা ধরন পাওয়া গেছে, তার মধ্যে একটি সংগ্রহ করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনার নমুনা পরীক্ষার ল্যাব থেকে। এই ব্যক্তির বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়। তাঁর বয়স ৫০ বছর। অন্যজনের নমুনা পাওয়া গেছে শেভরন থেকে। তাঁর বয়স ৩২ বছর। তাঁদের দুজনের কেউ-ই ভারতে যাননি। এমনকি তাঁদের কোনো আত্মীয়ও ভারত থেকে আসেননি।

গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল্-ফোরকান। সহ-গবেষক ছিলেন বিভাগের শিক্ষক লায়লা খালেদা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক সুযত পাল প্রমুখ। গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ।

প্রধান গবেষক মোহাম্মদ আল্-ফোরকান প্রথম আলোকে বলেন, মূলত ৬টি দেশে করোনার অতি সংক্রমণ লক্ষণীয়। দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, ব্রাজিল ও ভারত। চট্টগ্রামে যাঁদের নমুনায় ডেলটা ধরন পাওয়া গেছে, তাঁদের কেউ-ই ভারতে যাননি। ফলে তথ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করে এমন ধারণা করা যায় যে, চট্টগ্রামে ভারতীয় ডেলটা ধরনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি সংক্রমণ) প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে।

মোহাম্মদ আল্-ফোরকান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় চট্টগ্রামে করোনার চারটি প্রকরণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিটা ধরনের আধিক্য বেশি। এই সংখ্যা ৩৩ জন। তবে বিভিন্ন দেশ হতে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় প্রকরণের সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যধিক। তাই দ্রুত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো পরিণতি ভারতের মতো ভয়াবহ হতে পারে।’

সহ-গবেষক লায়লা খালেদা বলেন, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের ভারতীয় প্রকরণটি শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এখনই সতর্ক না হলে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

গবেষকেরা জানান, তাঁদের এই গবেষণা চলমান রয়েছে। সংগৃহীত নমুনাগুলোর ধরন বিশ্লেষণের পাশাপাশি ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচনের কাজ চলছে। শিগগির তার ফলাফল পাওয়া যাবে।