চন্দ্রায় মানুষের জট, বিকেলে কয়েক গুণ বাড়ার শঙ্কা

গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় মানুষের ভিড়। আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা ছবি
প্রথম আলো

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়। ঈদ কিংবা বিশেষ কোনো ছুটিতে উত্তরবঙ্গের মানুষ বাড়িতে যাওয়া–আসার সময় চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যানজটে আটকা পড়ে নাজেহাল হয়নি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। সেই চিরচেনা যানজট এবার নেই। তবে যানবাহন চলাচলে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় চন্দ্রা ত্রিমোড়ে সৃষ্টি হয়েছে মানুষের জট।

ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় শত শত ঘরমুখী মানুষ যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। করোনা নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই। সামনে খালি যে যানবাহন পাচ্ছেন, তাতে উঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কেউ ট্রাকে, কেউ মাইক্রোবাসে, কেউবা মোটরসাইকেল ভাড়া করে বাড়ির পথে রওনা হচ্ছেন। কাউকে কাউকে পায়ে হেঁটেও যেতে দেখা গেছে।

১০-১২ জনের একটি দল চন্দ্রার দিক থেকে পায়ে হেঁটে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দিকে যাচ্ছে। তাদের কারও হাতে ধানকাটার কাঁচি, কারও হাতে আছে দা-কোদাল। তাদের সঙ্গে কথা হয় খাড়াজোড়া এলাকায়। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুরা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আলীম বলেন, ‘মুই হনু আসল অংপুইরা (রংপুর), বাসোত উঠুম না, দরকারে মুই হাঁটি হাঁটি অংপুর (রংপুর) যাইম।’

ভোগড়া লাবিব ফ্যাশন কারখানার শ্রমিক মহব্বত আলী চাকরির কারণে থাকেন বাসন এলাকায়। সাহ্‌রি খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে অটোরিকশায় ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে চন্দ্রা এসেছেন। তিনি যাবেন রাজশাহীর মতিহার এলাকায়। চন্দ্রায় এসে সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছেন, কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। কীভাবে যাবেন, জানতে চাইলে বলেন, ‘একটা উপায় হয়ে যাবে। বাস যদি না পাই, তাহলে ট্রাকে উঠে চলে যাব। বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করব, এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে। করোনায় যা হয় হবে।’

কোনাবাড়ি এলাকার কারখানাশ্রমিক আরহাম হোসেন বলেন, ‘১০ দিনের ছুটি পেয়েছি। এত দিন এখানে থেকে কী করব? তাই যেভাবেই হোক বাড়িতেই যাব।’ কারখানাশ্রমিক সামিয়া আক্তার বলেন, ‘চাকরির কারণে বেশির ভাগ সময় বাড়িতে যেতে পারি না। তাই বলে ঈদের সময় বাড়ি যাব না, তা কি হয়!’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের ওপর দিয়ে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। তবে লোকাল যাত্রীবাহী বাস, কিছু ট্রাক-পিকআপ ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যাত্রীবাহী পরিবহন না পেয়ে মানুষের জট লেগে আছে। আজ সকাল থেকে ওই জট শুরু হয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়তে থাকে। কারখানাগুলোতে প্রথমে ছুটি ছিল তিনদিনের। কিন্তু এখন তাঁরা আন্দোলন করে ১০ থেকে ১২ দিন করে ছুটি আদায় করছেন। তাতে ধারণা করা হচ্ছে, বিকেলের পর থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখী মানুষের চাপ কয়েক গুণ বাড়বে। মহাসড়কে যানবহনের কোনো জটলা যাতে সৃষ্টি না হয়, তার জন্য পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আগের মতোই চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অনেকে পিকআপে করে বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন
প্রথম আলো

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। মহাসড়কে কোনো যানজট নেই, তবে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখী মানুষের অনেক ভিড়।