চবিতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ

সিমেন্টের বস্তা কেটে তাতে পানি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

অনুষদের কাজে নিয়োজিত চার শ্রমিককে মারধরের পর এবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্মাণসামগ্রী নষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত শনিবার রাতে চার শ্রমিককে মারধর করা হয়। আর আজ মঙ্গলবার ভোরে নির্মাণসামগ্রী নষ্ট করা হয়। শ্রমিকদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।

সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে বারবার বাধা সৃষ্টি করার বিষয়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন এস এম সালামত উল্ল্যা ভূঁইয়া। চিঠিতে তিনি বলেছেন, আজ (মঙ্গলবার) থেকে আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ও জানমালের ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।

ডিনের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, আজ ভোরে ৪০০ সিমেন্টের বস্তা কেটে তাতে পানি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেনারেটরের বেল্ট কাটা হয়েছে। মোটর খুলে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রিক পাইপ খুলে ফেলা হয়েছে। ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত ছাদ রং ঢেলে নষ্ট করা হয়েছে। এসবের কারণে অন্তত দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে দুই মাস ধরে সৌন্দর্যবর্ধন ও সংস্কারকাজ চলছে। ডিন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এ কাজ চলছে। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই শ্রমিকদের মারধর ও বাধা সৃষ্টির ঘটনা ঘটে আসছে। গতকাল সোমবার রাতেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অনুষদে ঢুকে নিরাপত্তাপ্রহরীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ডিন সালামত উল্ল্যা ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই দুষ্কৃতকারীরা ঝামেলা করছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আজ পুলিশ মোতায়েন করেছে।

দুষ্কৃতকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে সালামত উল্ল্যা ভূঁইয়া বলেন, তারা কারা, তা তিনি জানেন না।

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্য পক্ষটি সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এই দুটি পক্ষ আরও অন্তত ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি), সিক্সটি নাইন, ভার্সিটি এক্সপ্রেস, বিজয়, বাংলার মুখ, কনকর্ড ইত্যাদি।

সিএফসির নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজাউল হক। সিক্সটি নাইনের নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে যে কাজ চলছে, সে ব্যাপারে রেজাউল ও ইকবালকে কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাঁরা ছাড়াও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আরও নেতা-কর্মী আছেন, যাঁদের ম্যানেজ করা হয়নি। মূলত তাঁরাই ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের কাজে ঝামেলা করছেন।

মোটর খুলে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ভার্সিটি এক্সপ্রেস, বাংলার মুখ ও বিজয় উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা গিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে ভার্সিটি এক্সপ্রেসের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে শনিবার বলেছিলেন, ‘ওখানে (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) নিম্নমানের কাজ হচ্ছিল। বিষয়টি দেখে জুনিয়ররা কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছিলেন। তবে সেখানে মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি।’

আজ প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ভোরে কে বা কারা সেখানে গেছেন, তা তিনি জানেন না। তাঁদের কোনো নেতা-কর্মী সেখানে যাননি। অন্য কেউ গিয়ে থাকলে তা তদন্ত করা হোক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলার মুখের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক আবু বক্করকে কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে শনিবার চার শ্রমিককে মারধরের বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘নিম্নমানের কাজ হওয়ায় জুনিয়ররা সেখানে গিয়ে বাধা দিয়েছেন।’

ফেলে দেওয়া হয়েছে নির্মাণ সরঞ্জাম
ছবি: সংগৃহীত

বিজয়ের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘এখানে যে কাজ চলছে, আমি সেটাই জানি না। কারা কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন, সেটাও জানি না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল বলেন, ‘ম্যানেজ হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বলেন, ‘ম্যানেজ মানে কী? বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ চলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে। এখানে ম্যানেজের বিষয় আসবে কেন? ছাত্রদের কেন ম্যানেজ করতে হবে? ফলে, ম্যানেজের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’