চরাঞ্চলে সবজি রক্ষায় কারেন্ট জাল, মরছে পাখি

সবজি রক্ষায় পাতা কারেন্ট জালে আটকা পড়েছে বাদুড়। সম্প্রতি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর গফুর মণ্ডলপাড়ায়।
এম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলে চাষ করা সবজি পাখির হাত থেকে রক্ষায় কারেন্ট জাল ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এসব জালে আটকা পড়ে মারা পড়ছে পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী। কারেন্ট জাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জেনেও স্থানীয় কৃষকেরা সবজি ও অন্যান্য ফসল রক্ষায় তা ব্যবহার করছেন।

সম্প্রতি গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে বেগুন, টমেটো,পাতাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়েছে। একটি বেগুনখেতের চারদিক ও ওপরে কারেন্ট জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কয়েকটি খেতে পাতা জালে বাদুড় আটকে মরে আছে। উজানচর, হাজী আব্দুল গফুর মণ্ডলপাড়া, হাবিল মণ্ডলপাড়া, তালুকদারপাড়া, দরাপের ডাঙ্গী এলাকার কয়েকটি বেগুনখেতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। দৌলতদিয়ার নৈমদ্দিন খারপাড়া, গেন্দু ব্যাপারীপাড়া, দুলাল সরদারপাড়ায় একই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন চাষি জানান, বাদুড়সহ বিভিন্ন পাখি এসে বেগুন খেয়ে যাচ্ছে, নষ্ট করছে। পাখি ও বাদুড়ের হাত থেকে রক্ষায় কৃষকেরা বাধ্য হয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন।

পাখির উৎপাত ঠেকাতে সবজিখেতে পাতা হয়েছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল। সম্প্রতি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর গফুর মণ্ডলপাড়ায়
এম রাশেদুল হক

কৃষক আলাল উদ্দিনের প্রায় দুই বিঘা জমিতে পাতা আছে কারেন্ট জাল। জালে একটি বাদুড় মৃত অবস্থায় আটকে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কৃষক আলাল উদ্দিনকে খোঁজ করেও পাওয়া গেল না। তবে অপর কৃষক এখলাস উদ্দিন বলেন, পাখি ও বাদুড়ের হাত থেকে বেগুন রক্ষা করতে আলাল উদ্দিনের মতো অনেকেই কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন।

কাক, শালিক, বাদুড়সহ নানা ধরনের প্রাণী বেগুন, টমেটো, ফুলকপি খেয়ে নষ্ট করে বলে জানান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল গফফার খান। তিনি বলেন, সবজি রক্ষা করতেই খেত কারেন্ট জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, কারেন্ট জাল অবৈধ, এসব জাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে। যেখানে উৎপাদিত হয়, সেখানে এসব বন্ধ করা দরকার। তা না করে মাঠপর্যায়ে এসব নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে লাভ কী?
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলে কৃষকদের ফসল বা সবজি রক্ষায় কারেন্ট জালের ব্যবহার সম্পর্কে তাঁর জানা নেই। এমনটি হলে খোঁজ নিয়ে কৃষকেরা কারেন্ট জাল যাতে ব্যবহার না করেন, সে বিষয়ে সচেতন করা হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, কারেন্ট জাল নদীতে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মাঠে সবজি রক্ষায় ব্যবহার করা যাবে কি না, তা সঠিক জানা নেই। এরপরও চাষিদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে কৃষি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।