চলনবিলে শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পেল ৬০টি পাখি

নাটোরের সিংড়ার পাকুরিয়াপাড়া থেকে প্রশাসন ও পরিবেশকর্মীরা ৬০টি পাখিসহ চার শিকারিকে আটক করে। আজ বৃহষ্পতিবার দুপুরেপ্রথম আলো

নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিল এলাকায় প্রশাসন ও পরিবেশকর্মীদের তৎপরতায় শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ৬০টি বক ও রাতচড়া পাখি। শিকারিরা ফাঁদ পেতে আজ বৃহস্পতিবার এসব পাখি শিকার করে হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে দুপুরে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চার পাখিশিকারিকে আটক করা হয় এবং পাখিগুলো উদ্ধার করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আটক ব্যক্তিদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে শিকারিদের ফাঁদ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং শিকার করা ৬০টি পাখিকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আজ দুপুরে সিংড়ার পাকুরিয়াপাড়া, চৌগ্রাম ও কলম গ্রামে পাখিশিকারিদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় হাতেনাতে চার পাখিশিকারিকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন বড়াইগ্রামের লক্ষ্মীপুর গ্রামের ফেলু প্রামাণিকের ছেলে শমসের আলী (৩৫), গুরুদাসপুরের নওপাড়া গ্রামের খয়ের উদ্দিনের ছেলে আবদুর জোব্বার (৩৪), সিংড়ার পাকুরিয়াপাড়া গ্রামের নাজির উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৬) এবং একই গ্রামের মৃত ইয়াছিন আলীর ছেলে ইয়াকুব আলী (৩৫)। অভিযানের আগে আগে তাঁরা ৬০টি বক ও রাতচড়া পাখি শিকার করে হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত পাখিগুলো নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়।

শিকারিরা প্রশাসন ও পরিবেশকর্মীদের নজর এড়াতে চলনবিলের দুর্গম এলাকায় ধানের জমিতে ফাঁদ পাততে শুরু করেছেন। খবর পেয়ে চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির কর্মীরা অন্তত পাঁচ কিলোমিটার পানি-কাদা মাড়িয়ে ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা হাতেনাতে শিকারিদের পাকড়াও করে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেন।
শিকারিদের কাছ থেকে উদ্ধার পাখিগুলোকে পরে অবমুক্তি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোরের সিংড়ার পাকুরিয়াপাড়ায়
প্রথম আলো

পাখি শিকারের দায়ে শমসের আলী ও আবদুর জোব্বারকে ২০ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং সাইফুল ইসলাম ও ইয়াকুব আলীকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিকেলে নাটোর কারাগারে পাঠানো হয় এবং বাকিদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক অর্থদণ্ড আদায় করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ইউএনও মোছা. নাসরিন বানু ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রকিবুল হাসান।

শিকারিদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আমরাও শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছি। পাখি শিকারিদের ছাড় দেওয়া হবে না। হাতেনাতে ধরতে পারলে শিকারিদের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
মোছা. নাসরিন বানু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিংড়া

চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি আখতারুজ্জামান বলেন, শিকারিরা প্রশাসন ও পরিবেশকর্মীদের নজর এড়াতে চলনবিলের দুর্গম এলাকায় ধানের জমিতে ফাঁদ পাততে শুরু করেছেন। খবর পেয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁদের কর্মীরা অন্তত পাঁচ কিলোমিটার পানি-কাদা মাড়িয়ে ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা হাতেনাতে শিকারিদের পাকড়াও করে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। প্রশাসন জরিমানার পাশাপাশি পাখিশিকারিদের কারাদণ্ড দিয়েছে।

ইউএনও মোছা. নাসরিন বানু দণ্ডাদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিকারিদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আমরাও শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছি। পাখি শিকারিদের ছাড় দেওয়া হবে না। হাতেনাতে ধরতে পারলে শিকারিদের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া অব্যাহত থাকবে।’