চাঁদা দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক ওসিসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

মো. মিজানুর রহমান
প্রথম আলো

পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে থানায় এনে নির্যাতন করার অভিযোগে নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমানসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক যুবলীগ নেতা বাদী হয়ে দ্রুত বিচার ২০১৯-এর ধারায় মামলাটি করেন।

তবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আদালত মামলাটি তদন্ত করার বিষয়ে কোনো নির্দেশ দেননি। মামলায় অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন একই থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হালিম ও কনস্টেবল জুয়েল রানা।

মামলার বাদী আলম তালুকদার পৌরসভার পুলিশ মোড় এলাকার বাসিন্দা এবং নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের তিনবারের সাবেক সাংসদ প্রয়াত জালাল উদ্দিন তালুকদারের ভাতিজা। আলম বাকলজোড়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি পেশায় বালু ব্যবসায়ী।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় আলম তালুকদার পৌর শহরের এমপির মোড় এলাকায় ছিলেন। এ সময় আবদুল কাইয়ুম (২০) নামের এক যুবক তাঁর তিন সহযোগী নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি দেখে আলম তালুকদার কাইয়ুমকে থামতে বলেন। কিন্তু কাইয়ুম তা না মেনে চলে যেতে চাইলে আলম ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন দৌড়ে গিয়ে কাছারি মোড় এলাকায় কাইয়ুমকে আটক করেন। পরে পুলিশে খবর দেন।
ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দুর্গাপুর থানার তখনকার ওসি মিজানুর রহমানের নির্দেশে এসআই আবদুল হালিম ও কনস্টেবল জুয়েল রানা পৌর শহরের মাছ মহাল থেকে আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চান। এতে আলম রাজি না হওয়ায় ওসির নির্দেশে ওই দুই পুলিশ সদস্য একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রাখেন। পরে রাত দেড়টার দিকে ওসি তাঁকে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতন করেন।
মারধরে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে পুলিশ তাঁকে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই তাঁকে পুলিশ ও পরিবারের লোকজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। পরদিন বিকেলে কিছুটা সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে রাতে থানায় এনে কাগজে স্বাক্ষর রেখে আদালতে চালান দেওয়া হয়। পরে তিনি জামিন পান।

ভুক্তভোগী বলেন, ঘটনার পরদিন নেত্রকোনা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকবর আলী মুন্সীসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা ওসি মিজানুর রহমানের আইনবহির্ভূত আচরণের সত্যতার প্রমাণ পান। এ কারণে এসপি ওই দিনই ওসিকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে যুক্ত করেন। এ ছাড়া ঘটনাটি তদন্তের জন্য ওই দিন ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাছ উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ নিয়ে ১১ আগস্ট প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘যুবলীগ নেতাকে মারধর, ওসি প্রত্যাহার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ১৩ আগস্ট ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এসআই হালিমকে দুর্গাপুর থানা থেকে সরিয়ে মদন থানায় এবং কনস্টেবল জুয়েলকে খালিয়াজুরি উপজেলার লেপশিয়া ফাঁড়িতে বদলি করা হয়।

সাবেক ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি এখনো শুনিনি। আর যেহেতু এখন একটি নিয়ম হয়েছে, গণমাধ্যমে কথা বলতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতির প্রয়োজন। তাই বিষয়টি অনুগ্রহ করে এসপি স্যারের কাছ থেকে জেনে নেবেন।’
নেত্রকোনার এসপি মো. আকবর আলী মুন্সী বলেন, মামলার বিষয়টি এখনো তাঁরা পুরোপুরি জানেন না। হয়তো আগামী রোববার বিস্তারিত জানা যাবে।