সিলেট মহানগর আ.লীগের নেতা বহিষ্কার

সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

চাঁদা দাবির অভিযোগে থানায় মামলা হওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদকে বহিষ্কারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ছালেহকে সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্তে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পেলে তাঁকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।

সংবাদ প্রকাশ ও ফেসবুকে শেয়ার দেওয়ায় সিলেটের স্থানীয় একটি দৈনিকের সম্পাদক-প্রকাশকসহ ১৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে আলোচিত হয়েছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ। মামলার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগজুড়ে গণমাধ্যমকর্মীরা মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এ ঘটনার তিন মাসের মাথায় চাঁদা দাবির অভিযোগে থানায় মামলা হওয়ায় তাঁর কর্মকাণ্ড আবার আলোচনায় আসে। এরপর নগর আওয়ামী লীগ জরুরি সভা করে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

দলীয় পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ছালেহ আহমদ আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে গতকাল রাতেই জেনেছেন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত তিনি মাথা পেতে নেবেন।

তাহলে যে অভিযোগে আপনাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, সেই অভিযোগ কি আপনি মেনে নিয়েছেন?—এমন প্রশ্নের জবাবে ছালেহ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, একটি অভিযোগে দল আমাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দলের এ সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নিয়েছি। তবে অভিযোগ তদন্ত করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির ওপর আমার আস্থা আছে। তদন্তে আশা করি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে এবং আমিও আমার দলীয় পদ ফিরে পাব।’

দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শাহজালাল উপশহর খেলার মাঠে নারী উদ্যোক্তাদের মেলার আয়োজন করেছিল ‘তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ মেলা করতে বাধা দেন। মেলার আয়োজকদের অভিযোগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিলেন। চাঁদা না দেওয়ায় তিনি মেলা বন্ধ করে দেন। এ অভিযোগে ৬ মার্চ মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় কাউন্সিলর ছালেহ আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেলার অয়োজক সংগঠনের একজন নারী সদস্য।

নারী উদ্যোক্তাদের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হওয়ার বিষয় নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ জরুরি সভা আহ্বান করে। গতকাল রাতে নগরীর একটি রেস্তোরাঁর হলরুমে ওই সভা হয়।

নারী উদ্যোক্তাদের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হওয়ার বিষয় নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ জরুরি সভা আহ্বান করে। গতকাল রাতে নগরীর একটি রেস্তোরাঁর হলরুমে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে সভা হয়। সভায় মহানগরের কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা ছালেহ আহমদকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।

সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর গত ৮ জানুয়ারি কেন্দ্রের অনুমোদন পাওয়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন ছালেহ আহমদ। পদ পাওয়ার দুই মাস পর তিনি সাময়িক বহিষ্কার হলেন। চাঁদাবাজির অভিযোগ ও মামলা ছাড়াও ছালেহ আহমদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সিলেটের স্থানীয় দৈনিক ‘একাত্তরের কথা’র সম্পাদক, সিলেটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চৌধুরী মুমতাজ আহমদসহ ১৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।

সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর গত ৮ জানুয়ারি কেন্দ্রের অনুমোদন পাওয়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন ছালেহ আহমদ। পদ পাওয়ার দুই মাস পর তিনি সাময়িক বহিষ্কার হলেন।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ দাপট নিয়ে ওই পত্রিকা গত ২৮ নভেম্বর ‘ভয়ে চুপ উপশহর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এ প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় ছালেহ আহমদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন।