চাঁদাবাজির মামলায় দুই যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

নওগাঁর মান্দায় ইউনিয়ন যুবলীগের দুই নেতা ও ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আজ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উপজেলার সতিহাট বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলার পর গ্রেপ্তার হন তাঁরা।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৪০), স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা (৪২) ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী সাগর হোসেন (২৪)।

পুলিশ বলছে, সতিহাট বাজারের ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম গতকাল সোমবার বিকেলে মান্দা থানায় জাহাঙ্গীর ও সোহেলের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাঁদা না দেওয়ায় ভবন নির্মাণে বাধা, প্রাণনাশের হুমকি ও মারপিটের অভিযোগ করেন তিনি।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের চকরাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সতিহাট বাজারের শহীদ মিনার–সংলগ্ন এলাকায় সড়কের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে দোকানঘর বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। দোকানঘর সম্প্রসারণ করার জন্য আগের ঘরটি সম্প্রতি ভেঙে ফেলেন। ওই স্থানে নতুনভাবে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। কাজ শুরুর পর থেকে গনেশপুর ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা, জাহাঙ্গীর আলমসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সদস্যরা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। সোমবার সকালে সোহেল ও জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় তাঁরা রেজাউলের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রেজাউলকে ধাক্কা দিয়ে ভবনের ভিত তৈরির জন্য করা গর্তের মধ্যে ফেলে দেন। বাধা দিতে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনকেও মারধর করেন ওই ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, সতিহাট বাজারের ওই ব্যবসায়ী সোমবার থানায় মামলা করেছেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামি জাহাঙ্গীর ও সোহেল এবং তাঁদের সহযোগী সাগরকে মঙ্গলবার দুপুরে সতিহাট বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বলছেন, শুধু রেজাউল ইসলাম নন, সতিহাট বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরাও ওই চক্রের কাছে জিম্মি। বাজারে নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা ভবন নির্মাণ করতে গেলেই জাহাঙ্গীর ও সোহেলের অনুসারীরা চাঁদা আদায় করেন।

ওই তিনজন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন সতিহাট বাজারে যান এই প্রতিবেদক। এ সময় তিনি অভিযোগকারী ব্যবসায়ীসহ বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা বলছেন, শুধু রেজাউল ইসলাম নন, সতিহাট বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরাও ওই চক্রের কাছে জিম্মি। বাজারে নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা নতুন ভবন নির্মাণ করতে গেলেই যুবলীগের নেতা জাহাঙ্গীর ও সোহেলের অনুসারীরা চাঁদা আদায় করেন।

ব্যবসায়ী মিরাজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘ছয়-সাত মাস আগে চক্রটির সদস্যরা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। প্রথমে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা আমার দোকানে তালা মেরে দেন। পরে ২০ হাজার টাকা দিলে তাঁরা আমার দোকানের তালা খুলে দেন। তাঁরা বাজারের আরও অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছেন। আমরা এর থেকে রেহাই চাই।’ নাজমুল হক নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দেড় বছর আগে বাজারে দোকানঘরের জন্য আমি একটি ভবন তৈরির কাজ শুরু করি। সে সময় জাহাঙ্গীর ও সোহেল চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে না চাওয়ায় আমাদের কাজ বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। পরে তাঁদের টাকা দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করি।’

আমার দাবি, অপকর্মে জড়িত ব্যক্তিরা যে দলের লোক হোক না কেন, তাঁদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়। আর যাঁরা তাঁদের সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক, তাঁদেরও যেন শাস্তি হয়।
হানিফ উদ্দিন, গনেশপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি

সতিহাট বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে এই প্রতিবেদক কথা বলার সময় সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন যুবলীগের নেতা জাহাঙ্গীর ও সোহেল রানাও। এ সময় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা দাবি করেন, ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলামের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অতীতেও তাঁরা কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোনোভাবে চাঁদাবাজি করেননি।

তবে চক্রটির অপকর্মের কথা জানা আছে ক্ষমতাসীন দলেরই স্থানীয় নেতা হানিফ উদ্দিনের। তিনি গনেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ও সোহেলের অত্যাচারে সতিহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। তাঁদের অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে একাধিকবার কথা বলেছি, তাঁদের সাবধান করেছি। কিন্তু তাঁরা তারপরও এ ধরনের অন্যায় কাজ করে চলেছেন। তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। আমার দাবি, অপকর্মে জড়িত ব্যক্তিরা যে দলের লোক হোক না কেন, তাঁদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়। আর যাঁরা তাঁদের সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক, তাঁদেরও যেন শাস্তি হয়।’