চাঁপাইনবাবগঞ্জে পার্ক নেই, শিশুরা বুঁদ মুঠোফোনে

খেলার মাঠ নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কের চরজোতপ্রতাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
খেলার মাঠ নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কের চরজোতপ্রতাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরোজ স্কুলে যাওয়ার আগেই মা-বাবা কাজের জন্য বাইরে যান। সাদিয়ার দিন শুরু হয় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। সেখান থেকে বাসা, এরপর স্কুল। স্কুল শেষ করে আবার কোচিং। ক্লান্ত সাদিয়া যখন বাসায় ফেরে, তখন সন্ধ্যা নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে।

শহরের শান্তির মোড় এলাকায় সাদিয়ার পরিবারের সদস্য কেবলই মা আর বাবা। রাতে মুদিদোকানি বাবা আর ব্যাংক কর্মকর্তা মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে সাদিয়ার অবসর সময়ও কাটে পাঠ্যবইয়ে বুঁদ হয়ে। মাঝের কিছু সময় কাটে টেলিভিশন দেখা আর মুঠোফোনে গেম খেলে। সাদিয়া বলছিল, ‘স্কুলে শ্রেণিকক্ষের বাইরে আমার কোনো বন্ধু নেই। বাসায় এসেও একা থাকতে হয়।’ কারণ ব্যাখ্যা করলেন সাদিয়ার মা রোজিনা খাতুন। বলছিলেন, বাসার আশপাশে খেলার কোনো মাঠ নেই। বাসার নিচে একা বের হওয়াও ইদানীং বাচ্চার জন্য নিরাপদ মনে হয় না। অগত্যা কোচিং, টেলিভিশন আর মুঠোফোনেই ব্যস্ত রাখতে হয় তাকে।

জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেল, পৌর এলাকার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শত বছরের পুরোনো হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও পূর্ণাঙ্গ মাঠ নেই। দু-একটির সামনে ফাঁকা জায়গা থাকলেও তা শিশুদের জন্য খেলাধুলার উপযুক্ত নয়।

হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গতকাল ব্যাডমিন্টন খেলছিল শিক্ষার্থীদের দুটি দল। তাদের মধ্যে ফাহিম শরাফি ও আহনাব শাহরিয়ার জানাল, স্কুলের ছুটি একটু আগেই হয়েছে। তাই বাড়ি না গিয়ে স্কুল মাঠে খেলছে তারা। কারণ তাদের বাসার আশপাশে কোথাও খেলার মাঠ নেই। একটু পর স্কুল থেকেই কোচিংয়ে যেতে হবে তাদের।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের মনিটরিং (তদারকি) কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, পৌর এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৮। এর মধ্যে কোনো বিদ্যালয়েরই খেলার উপযোগী মাঠ নেই। কোনো কোনো বিদ্যালয় আবার ব্যস্ত সড়কের পাশে। যানবাহনের হর্নের উচ্চ শব্দের মধ্যেই পড়ায় মনোযোগ দিতে হয় শিক্ষার্থীদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-সোনামসজিদ মহাসড়কের পাশেই পৌর শহরের চরজোতপ্রতাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, তিনতলা বিদ্যালয় ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থা। প্রতি তলায় দুটি করে কক্ষ। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে তিনতলার দুটি কক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক হামিদা খাতুন বলছিলেন, বিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের হাত-পা মেলে ছোটাছুটিরও এক চিলতে জায়গা নেই।

কথা হলো বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী গোলাম নবী, শারমিন সুলতানা, সোবহান আলী, নিকিতা রায়ের সঙ্গে। তারা বলছিল, টিফিনের সময়ও শ্রেণিকক্ষের মধ্যে থাকতে তাদের ভালো লাগে না। এর মধ্যে সড়ক দিয়ে পণ্যবোঝাই ভারী ট্রাক যাওয়ার সময় বিদ্যালয় ভবন কেঁপে ওঠে, তখন ভয় করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ এমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়ার বয়সও চার দশকের বেশি। অথচ পৌরসভার কোনো শিশুপার্ক বা কোনো পার্কই নেই।

জেলা শিশু একাডেমির ভারপ্রাপ্ত জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম লেন, প্রতিটি জেলায় শিশু একাডেমি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে সরকারের। এ ভবনে শিশুদের জন্য থাকবে খেলার কর্নার, মিলনায়তন, গ্রন্থাগার ও জাদুঘর।