চাকরি ছেড়ে হয়েছেন খামারি, হাটে গরু বেচতে এসেছেন সালমা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে চট্টগ্রামের বিবিরহাটে বিক্রি করতে এসেছেন সালমা খাতুন
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের বিবিরহাটে বসেছে কোরবানির পশুর বাজার। সেই হাটে গেলে হঠাৎ চোখ আটকে যাবে এক নারীর দিকে। আশপাশের পুরুষ ব্যাপারীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গরুর দেখভাল করছেন। ক্রেতাদের সঙ্গে গরুর দাম নিয়ে করছেন আলোচনা, দরকষাকষি। তিনি সালমা খাতুন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে তিনি বিবিরহাটে বিক্রি করতে এসেছেন সালমা। এবারের কোরবানি ঈদে বিবিরহাটে গরু নিয়ে আসা একমাত্র নারী বিক্রেতা তিনি।

গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে বিবিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় কাটছে সালমার। পরম মমতায় গরুর পরিচর্যা করছেন। নিজেই তৈরি করছেন প্রাণীগুলোর খাবার। খাবারের মিশ্রণে সব উপাদান ঠিক আছে কি না, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন তিনি। এসব করতে গিয়ে দম ফেলার ফুসরত নেই তাঁর। এরপরও গরুর যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না রয়ে যায়, সেজন্য সঙ্গে থাকা কর্মীদের দিচ্ছিলেন বিভিন্ন নির্দেশনা।

নারী উদ্যোক্তা সালমার বাড়ি উত্তরবঙ্গে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানেই তাঁর খামার। গত দুই বছর ধরে নিজের খামারে গরু পালছেন। তবে এর আগে কোরবানির পশুর হাটে গরু আনেনি তিনি। এবারই প্রথম গরু নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোজা চট্টগ্রামের পশুর হাটে এসেছেন সালমা। বিক্রির জন্য সঙ্গে এনেছেন ১০টি গরু।

কোরবানির জন্য হাটে আনা গরুর যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না রয়ে যায়, সেজন্য বিবিরহাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন সালমা খাতুন
ছবি: প্রথম আলো

নিজ এলাকায় বিক্রি না করে এতদূরে গরু নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে সালমা বললেন, তাঁদের এলাকার আরও অনেকে গরু নিয়ে বিবিরহাটে আসেন। এখানে নাকি বেশ ভালো দামে গরু বিক্রি হয়। তাই অন্যদের সঙ্গে তিনিও গরু নিয়ে এই হাটে এসেছেন। আশা করছেন, ১০টি গরুই বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

তবে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার, বিশেষত খামারি হওয়ার পথটা সহজ ছিল না সালমার। জানালেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার ফতেপুর গ্রামের মেয়ে তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক করেছেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। সেখান থেকে লাভ করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। খুব একটা খারাপ চলছিল না। তবে চাকরিজীবনে বড় ধাক্কা খান করোনা মহামারির সময়। ছাড়তে হয় চাকরি।

ওই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে সালমা বলেন, ‘চাকরি ছাড়লেও ঘরে বসে থাকার মানুষ আমি নই। প্রতিনিয়ত ভাবতাম, কী করা যায়। এভাবেই গরুর খামার দেওয়ার চিন্তা মাথায় আসে।’ সেই ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন সালমা। জমানো টাকা দিয়ে একটি গাভী কিনেন। শুরুর দিকে দুধ বিক্রি করতেন। দ্রুত বড় হতে থাকে তাঁর খামার। এক পর্যায়ে ছয় কাঠা জমির ওপর খামার গড়ে তোলেন। দুধের পাশাপাশি বিক্রি করতে শুরু করেন গরুও। আয় বাড়লে নতুন গরু কিনেন। দুই বছরের মধ্যে এখন তাঁর খামারে রয়েছে ২০টি গরু।

আরও পড়ুন

লালনপালন করতে করতে গরুগুলোর প্রতি ভীষণ মায়া জন্মে গিয়েছে বলে জানালেন সালমা। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় এই খামার ছেড়ে অন্য কিছু করি। কিন্তু ছাড়তে পারি না। অবলা পশুগুলোর প্রতি ভালোবাসা জন্মে গিয়েছে। তাদের মায়ায় জড়িয়ে গেছি। আসলে আমার পক্ষে এখন আর অন্য কিছু করা সম্ভব নয়। এখন এদের নিয়েই থাকব।’

আরও পড়ুন

সালমার বিষয়ে কথা হলো বিবিরহাট পশু বাজারের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রেজাউল করিমের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিবিরহাটে আগে কখনো কোনো নারী পশু বিক্রি করতে এসেছেন বলে জানা যায়নি। এবারের হাটে তিনিই (সালমা) একমাত্র নারী বিক্রেতা। এমনকি চট্টগ্রামের অন্যান্য পশুর হাটে কোন নারী গরু বিক্রি করতে এসেছেন বলেও জানা যায়নি। তাই ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সালমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন