চাকরি রক্ষায় ফিরছেন তাঁরা

শহরে পৌঁছাতে পোশাকর্মীদের কয়েক দফা পরিবহন পরিবর্তন করতে হয়েছে। গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। আর সঙ্গে ছিল ভোগান্তি। শহরে এসেও তা কমেনি। রিকশা ছাড়া তেমন কিছু ছিল না।
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড়। নগরের অন্যতম প্রবেশমুখে ব্যক্তিগত আর পণ্যবাহী গাড়ির জট। রিকশা প্রচুর। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে মানুষের ভিড়। তাঁদের অপেক্ষা গাড়ির জন্য। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ। রিকশা পেলেও ভাড়া কয়েক গুণ বেশি। তারপরও উপায় না দেখে কেউ বাড়তি ভাড়ায় গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। কেউ হেঁটেই।

আজ শনিবার বেলা তিনটায় এই চিত্র দেখা যায়। কাল রোববার খুলছে পোশাক কারখানা। এই খবরে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া পোশাককর্মীরা শহরে ফিরতে শুরু করেছেন। শহরে পৌঁছাতে কয়েক দফা পরিবহন পরিবর্তন করতে হয়েছে। গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। আর সঙ্গে ছিল ভোগান্তি। শহরে এসেও তা কমেনি। রিকশা ছাড়া তেমন কিছু ছিল না।

বিকেলে অক্সিজেন মোড়ে কথা হয় পোশাকশ্রমিক নূর নাহারের সঙ্গে। তাঁর এক হাতে ছিল ব্যাগ। অন্য হাতে ছেলে। পাশে ছিলেন এক আত্মীয়। অক্সিজেন এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন নূর নাহার। বাসা বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায়। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ কারখানা খোলার খবর পান। এ জন্য এক দিন আগে চলে এসেছেন। কিন্তু এ জন্য যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, তা বলার মতো না। এখন শহরে এসে গাড়ি পাচ্ছেন না। ছেলে আর ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকা। গণ পরিবহনের অভাবে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে অনেকে
ছবি: সৌরভ দাশ

একই এলাকায় রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আরেক পোশাককর্মী রনি আহমেদ। তাঁর বাড়ি রাউজান উপজেলায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, কিছুটা ব্যাটারিচালিত রিকশায় আবার বাকি পথ হেঁটে অক্সিজেন মোড়ে এসেছেন। লালখান বাজার এলাকায় তাঁর বাসা। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শহরে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আসলে তো হবে না। অনুপস্থিত থাকলে চাকরি চলে যাবে। তখন বউ-বাচ্চা নিয়ে খাব কী? চাকরি বাঁচাতে হবে আগে। তাই রিস্ক নিয়ে চলে আসছি।’

শহরের অক্সিজেন মোড়ের মতো শাহ আমানত সেতু এলাকা, অলংকার মোড়, সিটি গেট এলাকায় বিপুলসংখ্যক পোশাকশ্রমিকদের আসতে দেখা যায়। অনেককেই হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। তাঁদের কারও কোলে-কাঁধে সন্তান, কারও হাতে ব্যাগ ছিল।

গণপরিবহনের অভাবে অতিরিক্ত ভাড়ায় ভ্যানে করে যেতে হয় গন্তব্যে। শাহ আমানত সেতু এলাকা
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম শহরের বন্দর ও ইপিজেড এলাকায় অধিকাংশ পোশাক কারখানা অবস্থিত। এ ছাড়া শহরের অক্সিজেন, বায়েজিদ বোস্তামী, বাহির সিগন্যাল, কালুরঘাট শিল্প এলাকা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বাকলিয়া এলাকায় পোশাক কারখানা রয়েছে। পোশাকশ্রমিকেরা মূলত কারখানার আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন।

না আসলে তো হবে না। অনুপস্থিত থাকলে চাকরি চলে যাবে।
পোশাককর্মী রনি আহমেদ

এদিকে কঠোর বিধিনিষেধ চললেও নগরের অলিগলিতে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বিকেলে নগরের বহদ্দারহাটের খাজা রোড, শুলকবহর, হামজারবাগ, দুই নম্বর গেট, বায়েজিদ বোস্তামী, শের শাহ কলোনি, আতুরার ডিপো, চকবাজার এলাকায় দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। এসব এলাকায় ও অলিগলিতে লোকজন আড্ডায় মেতে ছিল।