চার কারণে সড়কে বেড়েছে দুর্ঘটনা

মানিকগঞ্জ অংশে সাড়ে পাঁচ মাসে ৬৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কফাইল ছবি

ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে আবার দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। গত সাড়ে পাঁচ মাসে এই মহাসড়কের শুধু মানিকগঞ্জ অংশেই ৬৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। সম্প্রতি মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

সাধারণ যাত্রী, হাইওয়ে পুলিশ ও যানচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটা সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ককে বলা হতো মৃত্যুর ফাঁদ। ১১টি অপ্রশস্ত বাঁকের কারণে এই সড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটত দুর্ঘটনা। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরের মৃত্যুর পর এই মহাসড়কের ১১টি বাঁক প্রশস্ত করা হয়। এরপর দুর্ঘটনা কমে আসে। তবে চালকের অদক্ষতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, অপ্রশস্ত সড়ক এবং তিন চাকার গাড়ি চলাচলের কারণে সম্প্রতি আবার এই মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঘটনা বেড়ে যায়।

সম্প্রতি মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। এই মহাসড়কে চলাচলকারী সেলফি পরিবহনের বাসের অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ তাঁদের। সামাজিক সংগঠনগুলো সভাও করেছে। দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর দাবিও উঠছে।

গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। স্পিডমিটারে নির্ধারিত গতিসীমা পার হলে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

গোলড়া হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত কালামপুর থেকে তরা সেতু পর্যন্ত সড়কে ২৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ৪৭ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩টি। বরঙ্গাইল হাইওয়ে ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, একই সময়ে তরা সেতু থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত সড়কে ৩৯টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন এবং আহত হন ৫৯ জন। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১১টি। সব মিলিয়ে গত সাড়ে চার মাসে মহাসড়কে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হন। তবে প্রকৃতপক্ষে দুর্ঘটনা এবং হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে স্থানীয় লোকজনের ধারণা।

সেলফি পরিবহনের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের চালকদের প্রত্যেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। নিয়ন্ত্রিত গতির মধ্যে চালকদের গাড়ি চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, সম্প্রতি সেলফি পরিবহনের বাসের কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এই পরিবহনের কর্তৃপক্ষ এবং পরিবহনসংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালে এ পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এ ছাড়া বিআরটিএর মাধ্যমে এ পরিবহনের চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।