চার কেজি কাতল শিকারের পুরস্কার দুই লাখ টাকা

চলছে শৌখিন মৎস্য শিকারিদের নিয়ে মাছ শিকারের প্রতিযোগিতা। শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের বড়দেওয়ানপাড়ার দেওয়ান দিঘিতে
ছবি: প্রথম আলো

২২ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন নাসির উদ্দিন। সারা দিন বড়শি ফেলেও মাছের দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত নিরাশ হতে হয়নি শৌখিন এই মৎস্যশিকারিকে। পেয়ে যান সোয়া চার কেজি ওজনের একটি কাতল। এই মাছ শিকার করে প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন দুই লাখ টাকা।

শুক্রবার দিনভর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের বড়দেওয়ানপাড়ার দেওয়ান দিঘিতে এই মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে ছিল দেওয়ান দিঘি মৎস্য চাষ সমিতি নামের একটি সংগঠন।

শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত প্রতিযোগিতা চলে। এতে মোট ২১ জন শৌখিন মৎস্যশিকারি অংশ নেন। তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে এসেছিলেন। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে ২২ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছিল আয়োজকদের। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের জন্য ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার সাতটি পুরস্কার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিনের শিকার করা মাছটির ওজন ছিল ৪ কেজি ২৪০ গ্রাম। প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবে তিনি পান দুই লাখ টাকার পুরস্কার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অশিউড়া গ্রামের শিতোষ বিশ্বাস শিকার করেন ৪ কেজি ৬০ গ্রাম, ৩ কেজি ৭৭৫ গ্রাম ও ৩ কেজি ২১০ গ্রাম ওজনের তিনটি কাতল মাছ। এর ফলে তিনি একাই দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ পুরস্কার করায়ত্ত করেন। তিনি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

একাই তিনটি পুরস্কার জিতে উচ্ছ্বসিত শিতোষ বিশ্বাস। তিনি সব মিলিয়ে ২৫ কেজি মাছ শিকার করেছেন। তার দামই ৭ হাজার টাকা। শিতোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মৎস্য শিকারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকি। আজ তিনটি পুরস্কার পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এ ছাড়া মাছও পেয়েছি অনেক।’

প্রতিযোগিতা দেখতে পুকুরপাড়ে ভিড় করেন মানুষজন। শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের বড়দেওয়ানপাড়ার দেওয়ান দিঘিতে
ছবি: প্রথম আলো

সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া গ্রামের শান্তি চন্দ্র ধর ৩ কেজি ৮৫০ গ্রাম ওজনের কাতল মাছ শিকার করে তৃতীয় হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকার জাড়ু মিয়া ৩ কেজি ৬৩০ গ্রাম ওজনের কাতল শিকার করে হয়েছেন পঞ্চম। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৩৫ হাজার টাকা। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের ফজল মিয়া ২ কেজি ৭৯৫ গ্রাম ওজনের কাতল মাছ শিকার করে সপ্তম হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২৮ হাজার টাকার পুরস্কার।

এদিকে এই প্রতিযোগিতা দেখতে দিঘির চারপাশে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেন সরাইল উপজেলা শৌখিন মৎস্য শিকার সমিতির সভাপতি রতন বক্স।

এর আগে গত ২১ আগস্ট এই দিঘিতে একই রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল। ওই আসরে ৪ কেজি ২৫০ গ্রাম ওজনের কাতল মাছ শিকার করে প্রথম হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকার ওয়াশিম মিয়া।

আয়োজক সংগঠন দেওয়ান দিঘি মৎস্য চাষ সমিতির সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর এ দিঘিতে তিন-চারবার এ রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকেন তাঁরা। এতে দেশের বিভিন্ন জেলার শৌখিন মৎস্যশিকারিরা অংশ নেন। সরাইল উপজেলার শত বছরের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে কাজ করে যাবেন তাঁরা।