বগুড়ায় ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্র
চাল-আটা কিনতে হুমড়ি
বাজারে এক কেজি আটা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা। খোলাবাজারে প্রতি কেজি আটা ১৮ টাকায় মিলছে।
বগুড়ায় খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল ও আটা কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ মানুষের ভিড় থাকায় অনেকে খালি হাতে ফিরেছেন। গতকাল সোমবার ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এক কেজি আটা কিনতে এখন ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা। আর খোলাবাজারে প্রতি কেজি খোলা আটা ১৮ টাকায় মিলছে। এক কেজি মোটা চাল মিলছে ৩০ টাকায়। অথচ খুচরা বাজারে এই চাল কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে গড়ে ৪৫ টাকা। দাম কিছু সাশ্রয় হওয়ায় শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষ ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্রে ভিড় করছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারিভাবে প্রতিদিন একজন ওএমএস পরিবেশকের (ডিলার) জন্য এক হাজার কেজি চাল এবং এক হাজার কেজি আটা বরাদ্দ থাকে। সপ্তাহের ৬ দিন শহরের ২১টি ওয়ার্ডে ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রে ১৩ জন পরিবেশকের মাধ্যমে এসব চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। জেলা শহরের বাইরে ১১টি উপজেলায় পরিবেশক আছেন ৩৭ জন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল এবং পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারেন। পাঁচ কেজি হারে চাল ও আটা বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ মানুষের হাতে এই চাল ও আটা পৌঁছানো সম্ভব।
প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে ৪০০ ক্রেতা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন। অথচ শহরের প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রের লাইনে ক্রেতার সংখ্যা দ্বিগুণ। এ সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। ফলে দুপুরের মধ্যে বিক্রয়কেন্দ্রে বরাদ্দ ফুরিয়ে যাচ্ছে। গতকাল শহরের কালীতলা হাট, সুবিল স্কুল, হাসনাজাহান ভান্ডারী উচ্চবিদ্যালয়, কানুচগাড়ি সিটি স্কুল এবং বকশীবাজারের ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে পণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ সারি। কানুচগাড়ি সিটি স্কুল কেন্দ্রে তিন কেজি আটা কেনার জন্য বেলা ১২টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রহমান নগরের শ্রমজীবী সোনাভান বেগম (৫৫)। তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি কিছু কিনতে পারেননি। সেখানে চাল ও আটা বিক্রি করছিলেন পরিবেশক মোহাম্মদ পারভেজ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আশ্ররাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, খুচরা বাজারের চেয়ে ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রে চাল ও আটার দাম খুবই সাশ্রয়ী হওয়ায় ক্রেতার ভিড় বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১ মার্চ থেকে জেলায় ২৮৩ জন পরিবেশকের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি শুরু হচ্ছে। ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮ জন কার্ডধারী ব্যক্তিপ্রতি ১০ টাকা কেজি দরে মাথাপিছু ৩০ কেজি করে চাল কিনতে পারবেন।
শহরের সেউজগাড়ি রেলওয়ে বস্তির রাশেদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামার সোয়ামি নাই। মানুষের বাসাত কাম করে সংসার চলে। ঘরত তিনডা ছলপল। ভাত রান্ধিবার ম্যালা খরচ। চাল, ডাল, তরিকরি, পেঁয়াজ, তেল, লবণ, খড়ি কিনবার টেকা পামু কোনটে। এটি কম দামে আটা কিনে আনলা রুটি করে খাই।’
সুত্রাপুর-সেউজগাড়ি বিক্রয়কেন্দ্রে আটা কিনতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েও তিন কেজি আটা পাননি রিকশাচালক আশরাফ আলী (৬০)। তিনি বলেন, ‘তিন সের আটা কিনবার জন্যি বিয়ান থ্যাকে লাইনত খাঁড়া হয়্যা আচি। এক বেলা কামাই শ্যাষ। এখন শুনচ্চি দোকানত আটা শ্যাষ। খালি হাতে ফিরা লাগিচ্চি।’