চালকল ও গভীর নলকূপের মিটার চুরি করে চাঁদাবাজি

■ চুরি করা মিটার ফেরত দিতে প্রতিটির জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করে চক্রটি।

■ পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার দুই যুবকের কাছে পগুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

নওগাঁ জেলার ম্যাপ

নওগাঁয় গভীর নলকূপ ও চালকলের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। চক্রটি প্রথমে পল্লী বিদ্যুতের মিটার চুরি করে। এরপর মিটারের জায়গায় মুঠোফোন নম্বর রেখে যায়। সেই নম্বরে কল করলে মিটার ফেরত পেতে গ্রাহকের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। এভাবে চুরি করা বৈদ্যুতিক মিটার ফেরত দিতে প্রতি মিটারের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করছে চক্রটি।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে করে নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের আতিথা জালম এলাকা থেকে চোর চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে নওগাঁ ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি হলেন বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার বিনাহালি গ্রামের মাসুদ রানা (২৯) ও মাজিন্দা বড় চাপড়া গ্রামের আবদুল্লাহ (২৬)। তাঁদের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় মামলা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার বলেন, মিটারের মালিকেরা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ না করলেও সম্প্রতি নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে মিটার চুরির বিষয়ে পুলিশ সুপারকে অবগত করা হয়। এরপর মাঠে নামে নওগাঁ ডিবি। গ্রেপ্তার দুই যুবকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও সমিতি-২ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে জেলায় গভীর নলকূপ, চালকলসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংযোগের ২১৪টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। এর আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংযোগের ডিজিটাল মিটার সকেট, ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুতের তার চুরি হয়েছে। যেগুলোর মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।

নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের ইলশাবাড়ি গ্রামের মেসার্স হারুন চালকলের মালিক হারুনুর রশিদ বলেন, ২০-২৫ দিন আগে তাঁর চালকলের দুটি মিটার চুরি হয়। চুরি যাওয়া মিটারের জায়গায় একটি ফোন নম্বর ছিল। সেখানে লেখা ‘মিটার ফেরত চাইলে এই নম্বরে কল করুন’। ওই নম্বরে ফোন করলে ওপাশ থেকে মিটার দুটির জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে দেনদরবার করে চোরদের পাঠানো একটি বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠান। এরপর চোরেরা চালকলের কাছে রাস্তার পাশে মিটার দুটি রেখে যায়।

থানায় কোনো অভিযোগ করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ করলে মিটার ছয় মাসেও উদ্ধার হতো না। এ ছাড়া চোরেরা পুলিশকে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে মিটার আর কখনো ফেরত দেবে না বলে হুমকি দেয়। তাই এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, সম্প্রতি বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। জেলা গভীর নলকূপ মালিক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, মিটারের মালিকেরা আইনি জটিলতা ও পুলিশি ঝামেলা এড়ানোর জন্য থানায় মামলা দিচ্ছেন না। তা ছাড়া অনেক মালিক মনে করেন, আইনি প্রক্রিয়ায় গেলে মিটার ফেরত পেতে অনেক দেরি হবে, সে জন্য তাঁরা টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিচ্ছেন।

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে চলতি মাসের শুরুতে পুলিশ সুপারকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।