চালকের বেশে ছিনতাই

সিএনজিচালিত অটোরিকশার কিছু চালক মাঝপথে গাড়ি নষ্ট হওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র।

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরে চালকের বেশে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার কিছু চালক। মাঝপথে গাড়ি নষ্ট হওয়ার কথা বলে দলের অন্য সদস্যদের সহযোগিতায় হাতিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র। আবদুল খালেক নামের ছিনতাই চক্রের এক সদস্যের গত শনিবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

চালকের বেশে থাকা ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মো. আবদুল ওয়ারীশ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসা কিছু ছিনতাইকারী অভিনব কৌশলে ছিনতাই করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের তথ্যভান্ডার তৈরি করবে পুলিশ। পাশাপাশি গাড়িচালক নির্ধারণে সতর্ক থাকার জন্য মালিকদের জানাবেন বলেও জানান তিনি।

পুলিশ সূত্র জানায়, এক দশক আগে নগরে নুরুল আলম ওরফে হামকা গ্রুপ সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছিনতাই করত। তারা গলায় গামছা পেঁচিয়ে যাত্রীদের হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দিত। নুরুল আলম কারাগারে থাকলেও তাঁর কিছু সহযোগী জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন কৌশলে শুরু করেছেন ছিনতাই।

১৭ নভেম্বর আবছার উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী নগরের হালিশহর এক্সেস রোড দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর তাঁকে বহনকারী গাড়িটির চাকা নষ্ট হয়েছে বলে গাড়ি থামান চালক।

মুহূর্তের মধ্যে পেছনে থাকা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আসা তিন ব্যক্তি আবছারের কাছে থাকা তিন হাজার টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

একই দিন আবদুর রহিম নামের আরেক ব্যক্তি একইভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ ঘটনায় আবছার উদ্দিন বাদী হয়ে হালিশহর থানায় মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ আবদুল খালেক নামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালককে গ্রেপ্তার করে। শনিবার তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, এক মাস আগে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে আসেন খালেক। হামকা গ্রুপের সদস্য আবুল হাশেম, মো. জয়নাল ও সেলিমের সঙ্গে আগে থেকে তাঁর পরিচয় ছিল। ঘটনার দিন (১৭ নভেম্বর) হাশেম তাঁকে হালিশহর এক্সেস রোড এলাকায় আসতে বলেন। একজন যাত্রী যাবে, এ রকম যাত্রী নেওয়ার জন্য বলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর গাড়িটি থামাতে বলেন।

তিনি আরও বলেন, হাশেমের কথামতো চাকা নষ্টের কথা বলে গাড়ি থামান খালেক। পেছনে থাকা হাশেমসহ তিনজন তাঁর গাড়ির যাত্রীর জিনিসপত্র নিয়ে নেন। পরে তাঁরা বিমানবন্দর সড়কের দিকে চলে যান। এভাবে এক মাসে তাঁর গাড়িতে করে পাঁচটি ছিনতাই করেন।

ঘটনার শিকার আবছার উদ্দিন জানান, চালক চাকা নষ্টের কথা বলায় তিনি গাড়িতে বসে ছিলেন। ওই সময় তিনজন লোক এসে তাঁর কাছে থাকা টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। তাঁদের হাতে ছুরি ও অস্ত্র ছিল। এ কারণে ভয়ে তিনি চিৎকার করতে পারেননি।

হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে থাকা ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা হয়। চালক খালেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

সব সিনএজিচালিত অটোরিকশাচালক ছিনতাইয়ে জড়িত নন বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু অটোচালক ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত। এসব চালকদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

পাশাপাশি গাড়িচালক নির্ধারণে মালিকদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান এই শ্রমিকনেতা।