‘চালকেরা খুশিমতো টাকা দেন’

বিনা রসিদে গরুর ট্রাকে ৫০০ টাকা, পিকআপ ৩০০ টাকা এবং ছোট মাইক্রোবাস থেকে ২০০ টাকা আদায় ।

ইলিশা ফেরিঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে ফেরি। গতকালের ছবি।
প্রথম আলো

করোনা পরিস্থিতিতে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে কম। বিভিন্ন যানবাহন থেকে বেশি হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া গরুসহ পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিও চলছে বলে জানিয়েছেন চালকেরা।

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের ইলিশা ফেরিঘাটে বড় ট্রাকের জন্য ৭৫ টাকা, ছোট গাড়ির জন্য ৫০ টাকা, মোটরসাইকেলের জন্য ৩৫ টাকা টোল নির্ধারিত আছে। তবে প্রতি গাড়ির জন্য গড়ে ৭৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। টোলের সঙ্গে বিনা রসিদে গরুর ট্রাকে ৫০০ টাকা, পিকআপ ৩০০ টাকা এবং ছোট মাইক্রোবাস থেকে ২০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। চালকদের অভিযোগ, ইজারাদারের লোকজন চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘাটের ইজারাদার ইউসুফ পাটওয়ারী বলেন, ঘাটের লাইনম্যান নুর ইসলাম চা খাওয়ার নাম করে কিছু টাকা ওঠায়। চালকেরা খুশি হয়ে ১০-২০ টাকা দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) লোকজন এই চাঁদাবাজি করতে পারেন।

গতকাল সোমবার ইলিশা ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা য়ায়, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চারটি ফেরি লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সেই ফেরি আবার গাড়ি ভরে ফিরে এসেছে। ঘাটে যানবাহন কম। টোল চার্টও দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মালবাহী ট্রাক ও পিকআপের চালক বলেন, ঘাটে ভিড় না থাকলেও চাঁদাবাজি বন্ধ নেই। আগে ঘাটে জট হলে কাঁচামালের গাড়ি আগে যাওয়ার জন্য ঘাটের লোকজনকে চাঁদা দিত। কিন্তু করোনার সময়েও চাঁদাবাজি চলমান আছে। গাড়িপ্রতি ৭৫ টাকা টোলের সঙ্গে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিনা রসিদে গরুর ট্রাকে ৫০০ টাকা, পিকআপ ৩০০ টাকা এবং ছোট মাইক্রোবাস থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব টাকা তুলছেন ইজারাদারের লোক নুর ইসলাম, বাপ্পী, শাহে আলমসহ কয়েকজন।

এ সম্পর্কে লাইনম্যান নুর ইসলাম বলেন, তিনি সামান্য বেতনে চাকরি করেন। বিআইডব্লিউটিসির কোনো লাইনম্যান না থাকার কারণে ঘাটে তাঁকেই গাড়ি সাজিয়ে রাখতে হচ্ছে। নইলে ঘাটে জট বেঁধে যায়। এ কারণে চালকদের কাছে হাত পাতলে ২-১০ টাকা খুশিমতো দেন। আগে যারা চাঁদাবাজি করত, তারাই মিথ্যা বদনাম ছড়াচ্ছে।

ইলিশা ফেরিঘাটের দায়িত্বে আছেন বিআইডব্লিউটিসির মেরিন অফিসার হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, তাঁদের লাইনম্যান নেই। আর ঘাটও তাঁদের নয়, বিআইডব্লিউটিএর। তাই টাকা ওঠানোর প্রশ্নই আসে না।

হারুন অর রশিদ আরও বলেন, ‘শুনেছি, ইজারাদারের লোকজন চালক ও ব্যাপারীদের কাছ থেকে গরু ও কাঁচামালের গাড়ি থেকে টোলের বাইরেও টাকা নিচ্ছে। কিন্তু কত নিচ্ছে, তা জানি না।’

বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, যানবাহনভেদে টোল নির্ধারণ করা আছে। সব গাড়ি থেকে ৭৫ টাকার নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন। পন্টুনের লস্কর ইজাদারকে চাঁদাবাজিতে সহায়তা করার কথা নয়। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, ঘাটে কোনো চাঁদাবাজির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।