চাল–গ্যাসের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ মানুষ

সিলেট নগরের বাগবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন আবুল আহসান। মা, স্ত্রী, ছোট ভাই, সন্তানসহ তাঁর পরিবারে ছয়জন সদস্য রয়েছেন। একটি দোকানে তিনি ব্যবস্থাপকের চাকরি করেন। করোনাকালে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় তাঁর বেতন কমেছে ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে সম্প্রতি চাল ও গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় আরও বেড়েছে।

আবুল আহসান বলেন, ‘করোনায় অনেকেরই আয় কমেছে। অথচ ব্যয় বাড়ছে। মাসখানেক আগে প্রতি কেজি চালের দাম চার থেকে ছয় টাকা বেড়েছে। চলতি মাস থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের দামও বেড়েছে। যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। এটা চলতে থাকলে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে হবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৬ জন মানুষের সঙ্গে এ প্রতিনিধির কথা হয়। প্রত্যেকেই চাল ও গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, সিলেটে পরপর দুই মাসে চাল ও গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ার ঘটনা ঘটল। এতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা বিপাকে পড়ছেন। গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁরাই সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। কারও আয় কমেছে, আবার কেউ কাজ হারিয়েছেন। কিন্তু খাওয়াদাওয়া তো বন্ধ থাকবে না।

ডিসেম্বর মাসে প্রতি কেজি চালের দাম চার থেকে ছয় টাকা করে বেড়েছে। গত মাসে ১২ কেজির যে সিলিন্ডার–ভর্তি গ্যাস ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়, এখন তা ১ হাজার ১৫০ টাকা।

ঘাসিটুলা এলাকার গৃহিণী মাহবুবা আক্তার বলেন, করোনাকালের এই সময়ে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নতুনভাবে মানুষজনের সমস্যায় ফেলল। একইভাবে চালের দাম বাড়ায়ও সবাই হতাশ। কৃচ্ছ্র করে অন্যান্য খরচ বাঁচানো গেলেও এ দুটি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ক্ষেত্রে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

চাল ও গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে প্রতি কেজি চালের দাম চার থেকে ছয় টাকা করে বেড়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসের শুরুর দিন থেকে একইভাবে গ্যাসের দামও বেড়ে গেছে। গত  মাসে ১২ কেজির যে সিলিন্ডার–ভর্তি গ্যাস ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়, এখন তা ১ হাজার ১৫০ টাকা।

বাগবাড়ি এলাকার প্রমা গ্যাস হাউসের মালিক পরদেশ রায় বলেন, গত মাসে ৩৫ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার ২ হাজার ৩০০ টাকায় পাইকারি বাজারে কিনতে পাওয়া যেত। এখন সেটা ২ হাজার ৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ দামের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ টাকা লাভ ধরে তাঁরা খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন। এ অবস্থায় একজন ব্যক্তিকে একই গ্যাস গত মাসের তুলনায় ২৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

মামুনুল ইসলাম নামের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক রিকশাচালক থাকেন বালুচর এলাকার একটি বস্তিতে। তিনি বলেন, চাল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এখন বেশি খরচ হচ্ছে।

সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর মাতাব উদ্দিন বলেন, তাঁর স্ত্রী গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন। করোনার পর তাঁদের দুজনের কাজ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এতে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় চাল ও গ্যাসের দাম বাড়ায় তাঁরা চোখে অন্ধকার দেখছেন।