চালে ঠকছেন কর্মহীন জেলেরা

ফাইল ছবি

ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নটি মূলত মেঘনা নদীর মধ্যে জেগে ওঠা একটি চর। এই ইউনিয়নে ১ হাজার ৩৪৫ জন কার্ডধারী জেলের মধ্যে ৭৮৪ জনকে চাল বরাদ্দ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। মার্চ ও এপ্রিল মাসে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ওই জেলেদের পরিবারপ্রতি (দুই মাসের জন্য) ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে সরকার। গত ২৯ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে একেকজন জেলেকে দুই মাসে ৮০ কেজির জায়গায় ৩৫-৩৬ কেজি চাল দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে মদনপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল খালেক মুঠোফোনে বলেন, ‘৩৫ কেজি দিই, হেই তো বেশি। বিয়ালে আমনেরে খরচের হিসাব দেহামু। উপজেলা পরিষদের গুদামেত্তোন চাউল আনতে কত খরচ অয়, দেহামু।’

ভোলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জেলেদের খাদ্য সহায়তার চাল কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বলছেন, বহন খরচসহ নানা ঘাটতির কারণে জেলেদের চাল কম দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার চাল পরিবহন খরচ ঠিকমতো দিচ্ছে না।

ভোলা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মার্চ ও এপ্রিল—দুই মাস ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার, বহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত নিষিদ্ধ। এতে জেলার প্রায় দুই লাখ জেলে পরিবার বেকার হয়ে পড়ে। চলতি বছর সরকার প্রথম ধাপে হতদরিদ্র ৭৮ হাজার কার্ডধারী জেলে পরিবারকে মার্চ ও এপ্রিলে ৮০ কেজি করে (প্রতি মাসের জন্য ৪০ কেজি) মোট ৬ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছে। দ্বিতীয় ধাপে সুপারিশের ভিত্তিতে আরও ১০ হাজার হতদরিদ্র কার্ডধারী জেলেকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দৌলতখান উপজেলা পরিষদ থেকে মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। তবে সরাসরি সড়কপথে এ ইউনিয়নে চাল পৌঁছানো সম্ভব হয় না। মেঘনা পার হয়ে নৌকায় বস্তা ওঠানামার খরচ বেশি পড়ে। ইউনিয়ন পরিষদ ১ টন চাল পৌঁছাতে খরচ দেখিয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ টাকা। এ ইউনিয়নে চাল বরাদ্দ হয়েছে ৬২ দশমিক ৭২ মেট্রিক টন। ইউনিয়ন পরিষদের হিসাবেই এ চাল বহনে খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুসারে সাড়ে তিন টন গুদাম (সরকারি) চাল বেচে এই টাকা পাওয়া সম্ভব। এই সাড়ে তিন টন বাদ দিলেও প্রায় ৫৯ টন চাল অবশিষ্ট থাকে, যা দিয়ে একেকটি জেলে পরিবারকে দুই মাসে প্রায় ৭৬ কেজি চাল দেওয়া যায়। তবে বাস্তবে তারা পাচ্ছে অর্ধেকের কম।

ইউনিয়ন পর্যায়ে গুদামে চাল পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব সমর্থন জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, অধিদপ্তরে ও মন্ত্রণালয়ের একাধিকবার সভায় তিনি ৪০ কেজির মজবুত প্যাকেট করার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু খাদ্য বিভাগের অনীহা প্রকাশ পেয়েছে।