চাহিদা অনেক, উৎপাদন কম

  • মুরগির বাচ্চা পালনের চাহিদা রয়েছে বছরে ৩৬ লাখের বেশি। খামারে বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা লাখ।

  • ২৫ জন জনবলের স্থলে রয়েছেন মাত্র ১০ জন। কোনো রকমে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ফাইল ছবি

দেশের উষ্ণতম অঞ্চলের মধ্যে যশোর অন্যতম। এ কারণে গরমসহিষ্ণু ফাউমি জাতের মুরগির বাচ্চার চাহিদা এ অঞ্চলে বেশি। দেশে গরমসহিষ্ণু জাতের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে। তবে এখানে চাহিদা অনুযায়ী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে না।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, যশোর অঞ্চলে এই মুরগির বাচ্চা পালনের চাহিদা রয়েছে বছরে ৩৬ লাখের বেশি। অথচ এ খামারে বছরে মাত্র দুই লাখ বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অথচ ৪০ লাখ ৩২ হাজার বাচ্চা উৎপাদনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ডিমপাড়া মুরগি রাখার ঘর আধুনিকায়ন করে প্রয়োজনীয় জনবল ও বরাদ্দ বাড়লে বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব।

৬২ বছর আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন ও আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় ২৭ বিঘা জমির ওপরে খামারটি গড়ে তোলা হয়। নানা সমস্যা আর অনিয়মের জালে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি আটকে রয়েছে।

গত সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, মুরগির বাচ্চা ফোটানোর ছয়টি আধুনিক যন্ত্রের (ইনকিউবেটর) মধ্যে মাত্র একটি যন্ত্র চালু রয়েছে। প্রয়োজনীয় ডিমের জোগান না থাকায় ওই যন্ত্রগুলো বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ডিম পাড়া মুরগি ও মোরগ পালনের জন্য ২০টি শেড (ঘর) রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি ব্যবহারের অযোগ্য। ওই শেডগুলোর চাল টিনের ও মেঝে নিচু। ফলে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যে শেডগুলোতে মুরগি পালন করা হচ্ছে, সেগুলোও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়নি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুরগির বিষ্ঠা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সামান্য

খামার সূত্রে জানা গেছে, উষ্ণ জলবায়ুতে খোলা পদ্ধতিতে ফাউমি জাতের মুরগির বাচ্চা পালনের উপযোগী। এই মুরগির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। খাদ্য কম লাগে। এক দিনের মুরগির বাচ্চা সরকারি ভর্তুকি মূল্যে ১২ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ কারণে এই বাচ্চার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।

২০২০ সালের জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত—তিন মাসে ৮৯ জন উদ্যোক্তা ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭৩০টি মুরগির বাচ্চার চাহিদা দিয়ে আবেদন করেছেন। খামারের বাচ্চা উৎপাদন সীমিত। যে কারণে আবেদন নেওয়া বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খামারের উপপরিচালক সফিকুর রহমান বলেন, মুরগির বাচ্চার চাহিদার আবেদন বন্ধ রাখা হয়েছে। তিন মাসে ৮৯ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি বাচ্চার চাহিদা দিয়ে আবেদন করেন। অথচ বছরে মাত্র দুই লাখ বাচ্চা উৎপাদনের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার বাচ্চা আবার সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের নিজস্ব খামারে পালনের জন্য রাখতে হয়। অবশিষ্ট ৭৫ হাজার বাচ্চা বিক্রির সুযোগ রয়েছে। অথচ বছরে বাচ্চার চাহিদা রয়েছে ৩৬ লাখের বেশি। বর্তমানে এক দিনের মুরগির বাচ্চার চাহিদার ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।

বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হওয়ার বিষয়ে সফিকুর রহমান বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে ডিম পাড়া মুরগি আড়াই হাজারটি পালন ও দুই লাখ বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সরকারি বাজেট-বরাদ্দ রয়েছে। ডিম ফোটানোর আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও মুরগি রাখার ঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো অতি প্রাচীন আমলের। তা ছাড়া ২৫ জন জনবলের স্থলে রয়েছেন মাত্র ১০ জন। কোনো রকমে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। খামারটি পূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হলে বছরে ৪০ লাখ ৩২ হাজার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হবে।

যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় ২৭ বিঘা জমির ওপরে খামারটির অবস্থান। নানা সমস্যায় অগ্রগতি আটকে রয়েছে।

কালোবাজারে মুরগির বাচ্চা

এই প্রতিষ্ঠানে যে সামান্য সংখ্যক বাচ্চা উৎপাদন হয়, এর বেশির ভাগ আবার চলে যায় কালোবাজারে। ১২ টাকা দামের এক দিনের মুরগির বাচ্চা দ্বিগুণ দামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কিনতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

যশোর সদর উপজেলার রাশেদুর রহমান নামের একজন উদ্যোক্তা বলেন, ‘সরকারি খামারের ফাউমি জাতের ৫০০টি মুরগির বাচ্চা নেওয়ার জন্য গত বছর আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো সেই বাচ্চা হাতে পাইনি। গত বছর ১২ টাকা দামের মুরগির বাচ্চা ১৮ থেকে ২২ টাকা দামে কিনতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে খামারের উপপরিচালক সফিকুর রহমান বলেন, ‘এই খামারে আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমিও শুনেছি। মূল ব্যাপার হলো, যেসব উদ্যোক্তা বাচ্চার চাহিদা দিয়ে আবেদন করেন, সব সময় তাঁদের খামারের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব হয় না। তাঁদের কেউ কেউ খামারে পালনের জন্য বাচ্চা কিনে বেশি দামে বাইরে বিক্রি করতে পারেন।’