‘চায়না দুয়ারিতে’ ধ্বংস হচ্ছে দেশি মাছ

জালের ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট মাছ বের হওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে মাছের বংশবিস্তারে বিঘ্ন ঘটায়।

নদী থেকে দুয়ারি তুলে আনার পর জাল মেরামত করছেন এক জেলে। গত রোববার গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া মজিদ শেখের পাড়ায়ছবি: প্রথম আলো

লোহার রডের তৈরি ছোট গোলাকার ও চতুর্ভুজ কাঠামো। এগুলো যুক্ত করে ১০০ থেকে ২০০ ফুট লম্বা কাঠামো তৈরি করা হয়। একে ঘিরে দেওয়া হয় জাল দিয়ে। চীনের তৈরি জাল দিয়ে মাছ শিকারের এই উপকরণ ‘চায়না দুয়ারি’ নামে পরিচিত। এই জাল দিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করা হচ্ছে।

উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের অনেক মানুষ পদ্মায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের অনেকেই এখন দুয়ারি ব্যবহার করছেন। এটি নদীর পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। এর জালের ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট মাছ বের হওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে মাছের বংশবিস্তারে বিঘ্ন ঘটায়।

এই দুয়ারি নদীর তলদেশে বসানো হয়। উভয় দিক থেকে ছুটে চলা যেকোনো মাছ সহজেই এতে আটকা পড়ে। একবার মাছ ঢুকে পড়লে বের হওয়ার সুযোগ থাকে না। নদীর ওপর থেকে চিহ্ন রাখতে বাঁশের খুঁটি পোতা হয়, যা দেখে সহজে বোঝা যায়, সেখানে দুয়ারি বাঁধা রয়েছে। একটি চায়না দুয়ারির দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ, মাগুরা, ফরিদপুর, পাবনা ও মানিকগঞ্জে নদীতে প্রথমে দুয়ারি ব্যবহার শুরু হয়। ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরা পড়ায় গোয়ালন্দেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

দৌলতদিয়া মজিদ শেখের পাড়ার পাশে নদীতে দেখা যায়, খুঁটির সঙ্গে চায়না দুয়ারি পুঁতে রাখা হয়েছে। নদীর পাড়ে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে জেলেরা অপেক্ষা করছেন। কেউ নদীর পাড়ে দুয়ারি রোদে শুকাতে দিয়েছেন। আবার কেউ নদীর পাড়ে বসে ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন।

রোদে জাল শুকাতে দিয়েছেন দুলাল শেখ নামের এক জেলে। তিনি বলেন, অল্প পুঁজিতে দুয়ারিতে অনেক মাছ পাওয়া যায়। নদীর মাছের চাহিদা সব সময় থাকে। দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই চায়না দুয়ারির প্রতি ঝুঁকছেন সবাই।

জমাত আলী নামের আরেক জেলে বলেন, ‘পুলিশ ঝামেলা করে। নৌ পুলিশ ও মৎস্য অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মাছ ধরতে হয়।’

এ সম্পর্কে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি মাত্র যোগদান করেছি। চায়না দুয়ারি কী, আমার ধারণা নেই। নৌ পুলিশের কেউ কোনো অন্যায় কাজে জড়িত থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’