চায়ের রাজ্যে পর্যটকদের ভিড়, খালি নেই হোটেল-রিসোর্ট
সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিনের ছুটি উপলক্ষে পর্যটকদের ভিড় জমেছে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। দুই দিনের ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে খালি নেই কোনো হোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের কোনো কক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কাল শনিবার পর্যন্ত হোটেল-রিসোর্টের সব কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটকই আজ শুক্রবার কক্ষ না পেয়ে ফিরে গেছেন। পুরো শ্রীমঙ্গল এখন পর্যটকদের আগমনে মুখর।
আজ শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা যায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। নয়নাভিরাম চা–বাগান, চা জাদুঘর, ডিনস্টন সিমেট্রি, চা–কন্যা ভাস্কর্য, নির্মাই শিববাড়ি, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, খাসিয়াপুঞ্জি, মণিপুরী পাড়া, গারোপল্লি, সাত রঙের চায়ের দোকান, লেবু ও আনারসবাগান, রাবারবাগান, হাইল হাওর, বাইক্কা বিলসহ প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোতে সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকেরা।
ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত মাইক্রোবাস, বাস ইত্যাদি নিয়ে পর্যটকেরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন। পর্যটকদের আগমনে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে শ্রীমঙ্গল শহরে। সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে শ্রীমঙ্গলে এসেছেন রিপন দেব নামের এক পর্যটক। শুক্রবার সকাল আটটায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে অনলাইনে একটি রিসোর্টের কক্ষ বুকিং করেছিলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এসে উঠেছেন তাতে। দুই রাত থেকে শনিবার বিকেলে চলে যাবেন নিজ বাড়ি রাজশাহীতে। রিপন দেব আরও বলেন, ‘সকালবেলায় স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছি। কুয়াশায় ঢাকা ছিল সবকিছু। খুবই ভালো লেগেছে।’
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আকিব উল্লাহ বলেন, ‘শীত মৌসুমে প্রতিবছরই পরিবার নিয়ে বের হই। গত বছর গিয়েছিলাম সাজেকে। এ বছর শ্রীমঙ্গলকে বেছে নিয়েছি। এখানে আগেও একবার এসেছিলাম। তবে স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে প্রথম এলাম। এখানকার চা–বাগানগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। সবাইকে নিয়ে চা–বাগান, লেক ইত্যাদি ঘুরে বেড়াচ্ছি। সবাই বেশ আনন্দিত।’
এ মাসে সব শুক্র ও শনিবার তাঁরা হাউসফুল পেয়েছেন। পর্যটকেরা প্রচুর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বেশির ভাগ হোটেল রিসোর্টেরই একই অবস্থা।
তাহানা খাতুন নামের এক পর্যটক বলেন, গতকাল রাতে শ্রীমঙ্গল এসেছেন। আজ শুক্রবার ভোরবেলায় বের হয়েছেন শ্রীমঙ্গল দেখতে। কুয়াশায় মোড়ানো শ্রীমঙ্গল অনেক সুন্দর। তা ছাড়া চা–বাগানের ভেতর চমৎকার সূর্যোদয় দেখেছেন। এখানে অনেক ঠান্ডা। সকালে কনকনে শীতে শরীর প্রায় বরফ হয়ে যাচ্ছিল। সূর্য ওঠার পর ধীরে ধীরে ঠান্ডা কমে গেছে।
এসকেডি আমার বাড়ি নামে রিসোর্টের মালিক সজল দাশ বলেন, এ মাসে সব শুক্র ও শনিবার তাঁরা হাউসফুল পেয়েছেন। পর্যটকেরা প্রচুর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বেশির ভাগ হোটেল রিসোর্টেরই একই অবস্থা।
আবাসন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালে এমনিতেই শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের ভিড় থাকে। এখন সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের ছুটির কারণে পর্যটকেরা বেশি এসেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছিল। আজ শুক্রবার শতভাগ ভাড়া হয়ে গেছে। কোনো হোটেল রিসোর্ট খালি নেই। আগামীকাল শনিবারও একই অবস্থা।
শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন প্রথম আলোকে বলেন, আজ শুক্রবার শ্রীমঙ্গলে ভিআইপি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পর্যটক রয়েছেন। সব হোটেল–রিসোর্ট পর্যটকেরা ভাড়া করে নিয়েছেন। এখানে আসা পর্যটকেরা যেন পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সে জন্য পুলিশের টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে। তা ছাড়া পুরো শ্রীমঙ্গলই তাঁদের নজরদারির মধ্যে আছে। পর্যটকেরা নির্বিঘ্ন ঘোরাফেরা করছেন।