চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করায় বহির্বিভাগের সেবা বন্ধ

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বজনদের হাতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় একজন চিকিৎসক, একজন ব্রাদার ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে আজ শনিবার সকাল থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীরা।  

এর আগে উপজেলায় এক মহিষের তাণ্ডবে তিন শিশুসহ চারজন গুরুতর আহত হয়। মহিষের আধা ঘণ্টার তাণ্ডবে মারা গেছে একটি গাভি, উপড়ে ফেলেছে একটি টিউবওয়েল, বিনষ্ট হয়েছে গাছপালা ও খেতের ফসল। ওই আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বজনদের হাতে একজন চিকিৎসক, একজন ব্রাদার ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে লাঞ্ছিত করা হয়। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে। ওই লাঞ্ছিতের ঘটনায় শুক্রবার রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। পুলিশ রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

পুলিশ, গ্রামবাসী ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের আবদুল হকের খামারের একটি মহিষ শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ছুটে যায়। মহিষটি আবদুল হকের প্রতিবেশী নুরু মিয়ার একটি গাভিকে শিং দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে। পরে গ্রামের আতাহার আলীর মেয়ে চৈতী বেগম (১২), তাঁর ভাগনে মোস্তাকিম মিয়া (৪) ও দুলাল মিয়ার মেয়ে ফারহানাকে (৫) মহিষটি শিং দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। শিশুদের রক্ষা করতে গিয়ে চৈতীর মা নুরুন্নারহারও (৪২) আহত হন।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে গ্রামবাসী তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে নুরুন্নাহার সঙ্গাহীন হয়ে পড়েন। এ সময় আহত দুই শিশু চৈতী ও ফরহানার অধিক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত ছিলেন চিকিৎসা কর্মকর্তা অধিতি রানী সাহা, ব্রাদার রাজীব হোসেন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাসেল চৌধুরী। রোগীদের অবস্থা গুরুতর দেখে অধিতি রানী সাহা ও রাজীব হোসেন তাদের জেলা সদরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন তেরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়ার (৪৫) ও মোস্তাকিম হোসেনের (৩০) নেতৃত্বে ১০-১২ জন কর্মরত চিকিৎসকসহ তিনজনকে লাঞ্ছিত করেন। রোগীর স্বজনেরা তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আসবাবপত্র ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। পরে রোগী ও স্বজনেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ত্যাগ করেন।

তেরকান্দা গ্রামের একাধিক লোকজন বলেন, ওই চার রোগীকে রাতেই জেলা সদরে নেওয়া হয়। পরে গভীর রাতে চৈতী বেগমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নোমান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই রোগীদের জেলা সদরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনেরা এক চিকিৎসকসহ তিনজনকে লাঞ্ছিত করেন এবং চেয়ার–টেবিল ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে থানা–পুলিশকে জানিয়েছি। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আজ সকাল থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছি।’

বাবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সন্ধ্যার পরপর রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক পাইনি। অনেক্ষণ পর একজন চিকিৎসক এসে চিকিৎসা না দিয়েই রেফার্ড করে দেন। আমি তাঁদের অনুরোধ করলাম রোগীদের অন্তত যেন ব্যান্ডেজ করা হয়। তাঁরা কিছুই করেননি। তখন গ্রামের কয়েকজন ছেলে কিছুটা উত্তেজিত হয়েছিল। গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে হাসপাতালের দালাল শ্রেণির কিছু লোকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে নয়। কাউকে লাঞ্ছিত করার মতো কিছু ঘটেনি। এগুলো মিথ্যা।’

সরাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’