চিকিৎসার জন্য তিশা পেল আরও ৩০ হাজার টাকা

চিকিৎসার জন্য তিশা আক্তারের (১৩) বোন সুবর্ণা আক্তারের হাতে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, ৬ ডিসেম্বর রাত ৮টা
প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাড়ের ভেতরে টিউমার ধরা পড়া মেধাবী শিক্ষার্থী তিশা আক্তারের (১৩) চিকিৎসায় পাশে দাঁড়াল জেলা কোরআন ও সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। বুধবার রাত ৮টার দিকে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে চিকিৎসার জন্য তিশার বোন সুবর্ণা আক্তারের হাতে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।

গত ১৩ নভেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আবার পায়ে হেঁটে সূর্যের আলো দেখতে চায় তিশা’ ও ১৬ নভেম্বর ‘তিশার চিকিৎসায় পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান, শিক্ষকসমাজ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, আইনজীবী ও প্রবাসীরা বুধবার রাত পর্যন্ত তিশার পরিবারকে প্রায় তিন লাখ টাকা সহায়তা করেছেন।

তিশা জেলার কসবা উপজেলার শিকারপুর তালপট্টি গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইনডিপেনডেন্ট স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় সে। ভর্তি হয় সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। পরে তার মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয়, হাড়ের ভেতরে টিউমার ধরা পড়ে। এরপর থেকে শয্যাশায়ী জীবন কাটাচ্ছে সে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১০-১২ লাখ টাকা। টাকার অভাবে তিশার চিকিৎসা আটকে গেছে।

এদিকে মেধাবী এই কিশোরীকে বাঁচাতে আর্থিক সহযোগিতার আশায় তার শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন তার মা আরজু আক্তার।
তিশার বড় বোন স্বর্ণা বলেন, ‘২০১৯ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় তিশা জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছে সে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তার ক্লাস রোল ছিল ১।’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে তিশার শরীরে প্রথম ব্যথা শুরু হয়। ১০ অক্টোবর পরিবারের লোকজন তাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করান। অবস্থার উন্নতি না হলে ১৩ অক্টোবর তাঁরা তিশাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিশাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। চিকিৎসকদের পরামর্শে ২৭ অক্টোবর তিশার এমআরআই করা হয়। পরীক্ষায় তিশার মেরুদণ্ডের ৬ শতাংশ হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে দেখা যায় এবং সেখানে একটি টিউমার ধরা পড়ে। টিউমারটি মেরুদণ্ডের হাড় থেকে বাইরে বের হয়ে এসেছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিশাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, তিশার মেরুদণ্ডে হাড় প্রতিস্থাপন ও টিউমার সরানো বাবদ তিন মাস সময় লাগবে। এই চিকিৎসার জন্য ব্যয় হবে ১০-১২ লাখ টাকা।
এদিকে বুধবার রাত আটটার দিকে জেলা কোরআন ও সুন্নাহ ফাউন্ডেশন শিশু ও বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) আবু সাইদ। উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন, সংগঠনের সদর উপজেলা শাখার সভাপতি রাসেল বিন শাহজাহান, সম্পাদক আলামিন বিন বজলুর রহমান, আইন উপদেষ্টা মাসুদুর রহমান, সরাইল উপজেলা শাখার উপদেষ্টা আমিজুর রহমান। সেখানে চিকিৎসার জন্য তিশার বোনের হাতে আবু সাইদ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন।

তিশার মা আরজু ও বোন স্বর্ণা বলেন, সহায়তার অর্থ দিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সিটি হসপিটালে তিশার টিউমার অপসারণ করা হয়। টিউমার অপসারণ করায় তার মেরুদণ্ডের হাড়গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন সেখানে আরেকটি অস্ত্রোপচার করতে হবে।
তিশাকে সহযোগিতা করতে চাইলে ব্যাংক হিসাব নম্বর ২১২১৫৭০০০৯৩১৬, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা অথবা আরজুর ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর ০১৭৮০৪২০৯৩৫–এ যে কেউ টাকা পাঠাতে পারেন।