চিতলমারী থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গুলিবিদ্ধসহ আহত অন্তত ২০

আজ দুপুরে মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসহ স্থানীয় লোকজন এক ছাত্রীর বিচারের দাবিতে মিছিল নিয়ে চিতলমারী থানা ফটকের সামনে জড়ো হন
ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাটের চিতলমারীতে এক কলেজছাত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ এনে থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল ছুড়েছেন ছাত্রসহ উত্তেজিত জনতা। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শতাধিক লোক থানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা থানা ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, থানা ঘেরাও করে হামলার ঘটনায় চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের ১২ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলাকারীদের মধ্যে আটজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে স্থানীয় এক কলেজছাত্রী তাঁর নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম অবমাননা করে পোস্ট দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় অনেকে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হন। গত রোববার রাতে পুলিশ ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। তখন ওই ছাত্রী দাবি করেন, তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে।

এদিকে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসহ স্থানীয় লোকজন ওই ছাত্রীর বিচারের দাবিতে মিছিল নিয়ে থানা ফটকের সামনে জড়ো হন। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। কিছুক্ষণ পর বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহামুদুল হাসান এবং চিতলমারী থানার ওসি কামরুজ্জামান খান উত্তেজিত জনতাকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে চিতলমারীর শেরেবাংলা ডিগ্রি কলেজের দিক থেকে আরও একটি বিক্ষোভ মিছিল আসে। একপর্যায়ে বেলা পৌনে একটার দিকে বিক্ষোভকারীরা থানা ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে সামাল দিতে শটগানের ২৪টি গুলি ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।

বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে থানা ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন বলে দাবি করছে পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক ও পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ওই ছাত্রীকে গত রাতেই আটক করেছে। তাঁর ফেসবুক আইডি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই উত্তেজিত জনতা থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। একপর্যায়ে তাঁরা থানা ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে থানার ওসিসহ পুলিশের ১২ জন এবং বিক্ষোভকারীদের ৮ জন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে থানা ভবনের জানালার গ্লাস ও কোয়ার্টারের কিছু মালামাল ভেঙে গেছে। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়ি, থানার চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

পরে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করা চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মামুন হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৯ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে তাঁদের অবস্থা গুরুতর না হওয়ায় তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগান থেকে ২৪টি গুলি ছুড়েছিল। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিত শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ১২ জনকে আটক করেছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।