চিতলমারীতে একটি পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ

বাগেরহাট জেলার মানচিত্র

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় সনাতন সম্প্রদায়ের মতুয়া মতে অনুষ্ঠিত শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় একটি পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের পাঙাশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সনাতন সম্প্রদায়ের রীতির বাইরে গিয়ে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় স্থানীয় এক সমাজপতি (সংখ্যালঘু নেতা) সমাজের সব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান থেকে তাদের আলাদা করার সিদ্ধান্ত দেন বলে অভিযোগ পরিবারটির। অভিযুক্ত সমাজপতি একঘরে করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।

ওই পরিবারের গৃহকর্তা শোভা রঞ্জন গুহ বলেন, গত বছর মহামারি চলাকালে পাঙাশিয়া গ্রামের কালিদাস মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি মারা যান। করোনার কারণে সে সময় তাঁর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করতে পারেনি মৃত ব্যক্তির পরিবার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিবারটি তাঁর অসমাপ্ত শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়। তারা সনাতন সম্পদায়ের প্রচলিত রীতির বাইরে অর্থাৎ কোনো ব্রাহ্মণ পুরোহিত ছাড়াই মতুয়া মতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই অনুষ্ঠানে আশপাশের তিন হাজার মানুষকে নিমন্ত্রণ করা হয়। এতে গ্রামের সনাতন সমাজের প্রধান স্কুলশিক্ষক মৃণাল কান্তি গুহ ১০৪টি পরিবার নিয়ে একটি সভা করেন। সভায় সনাতনী রীতির বাইরে মতুয়া মতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করার প্রতিবাদ হিসেবে তাঁরা ওই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

শোভা রঞ্জন গুহ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমিসহ আরও প্রায় ৫০টি পরিবার তাঁদের ওই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানে যোগ দিই। তাঁরা অন্য পরিবারগুলোর প্রতি রুষ্ট না হলেও শুধু আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং ভবিষ্যতে আমাদের পরিবারকে গ্রামের সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে না রাখার ঘোষণা দেন।’

শোভা রঞ্জন গুহের স্ত্রী আল্পনা হালদার স্থানীয় পাঙাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি বলেন, ওই ঘোষণার পর থেকে তাঁরা একধরনের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এখন সময় পাল্টালেও তাঁদের মানসিকতা পাল্টায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে মৃণাল কান্তি গুহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পাঙাশিয়া গ্রামের সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষেরা যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধর্মীয় আচার মেনে সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। সমাজ নিয়েই তাঁদের চলতে হয়। প্রায় এক বছর আগে কালিপদ মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি মারা যান। তাঁর পরিবার গ্রামের দীর্ঘদিনের ধর্মীয় রীতিনীতি উপেক্ষা করে মতুয়া মতে সম্প্রতি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যা গ্রামের অধিকাংশ সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ মেনে নিতে পারেননি।

মৃণাল কান্তি গুহ আরও বলেন, ‘তাঁদের ওই অনুষ্ঠানের কথা জানতে পেরে সবাইকে নিয়ে আমরা একটি বৈঠক করি। বৈঠকে কালিপদ মণ্ডলের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শোভা রঞ্জন গুহ ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর গ্রামের সবাই তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি নিয়ে গ্রামের সবাই একাধিকবার বসলেও ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা হয়নি। শোভার পরিবারকে একঘরে করে রাখার বিষয়টি সঠিক না। বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থায় ঝুলে আছে।’

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি শোনার পর তিনি খবর নিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে ওই পরিবারটিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দুই পক্ষকে নিয়ে বসতে বলা হয়েছে।