চিরকুটে মৃত্যুর কারণ ও নির্যাতনকারীদের নাম লিখে গেলেন তরুণ

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় টিকটক ভিডিও নিয়ে কয়েকজনের নির্যাতন সইতে না পেরে এক তরুণ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার পশ্চিম চর দরবেশ এলাকায় নিজ বাড়ির ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধারের দাবি করেছে পরিবার।

লাশ উদ্ধার হওয়া তরুণের নাম ইমরান হোসেন (১৮)। তিনি একই এলাকার মো. মাঈন উদ্দিনের ছেলে। ইমরান পেশায় নির্মাণশ্রমিক (রাজমিস্ত্রি) ছিলেন। তাঁর পরিবার বলছে, তাঁর লেখা একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে মৃত্যুর কারণ ও নির্যাতনকারী আটজনের নাম লিখে গেছেন ইমরান।

এদিকে গতকাল রাতেই পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় ইমরানের বাবা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মৃত্যুর পর ইমরানের বিছানার নিচ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। সেই চিরকুটে বরাত দিয়ে ইমরানের পরিবার জানায়, কয়েক দিন আগে উপজেলার পশ্চিম চর দরবেশ ও আদর্শগ্রাম এলাকায় মুছাপুর সড়কে গিয়ে ইমরান একটি টিকটক ভিডিও বানান। ভিডিও করার সময় ভুলবশত স্থানীয় এক মেয়ের ছবি উঠে যায়। সেই ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আটজন যুবক তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে ইমরান ভুল স্বীকার করে তাঁদের কাছে ক্ষমা চান। এরপরও ওই যুবকেরা তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও মারধর করেন।

স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে চর দরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য পলান উদ্দিন বলেন, কয়েক দিন আগে টিকটক করার সময় স্থানীয় এক মেয়ের ছবি ভিডিওতে থাকা নিয়ে ওই মেয়ের ভাইসহ সাত-আটজন ইমরানকে মারধর করেছেন। ইমরান তাঁদের কাছে বিষয়টির জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। এরপরও গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে আবারও ইমরানকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। তাঁদের নির্যাতন ও অপমান সইতে না পেরে ইমরান আত্মহত্যা করেছেন।

ইমরানের বাবা মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে শ্রমিক। রাজমিস্ত্রির কাজ করে খায়। অপমান সইতে না পেরেই সে আত্মহত্যা করেছে। এ ব্যাপারে আমি শিগগির মামলা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইমরান কাগজে যেসব ছেলেদের নাম লিখে গেছে, তাঁদের আমরা চিনি। নাম মনে নেই। কাগজে সব লেখা আছে। কাগজটি আজ (সোমবার) সকালে পুলিশকে দিয়েছি।’

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মোহাম্মদ বলেন, ১৮ বছরের ওই ছেলের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর পর তাঁর বিছানার নিচ থেকে উদ্ধার হওয়া ‘সুইসাইড নোটে’ উল্লেখ করা ঘটনাটি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। যাঁদের নাম উল্লেখ আছে, তাঁদের বিষয়েও পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে।