চুম্বক ফেলে লোহা ধরেন তাঁরা

সারা দিনে একেকজন কমপক্ষে ৪০০ টাকার ধাতব বস্তু তুলতে পারেন। এই টাকা দিয়েই চলে সংসার।

খালের পানিতে জাল ছুড়ে দেওয়ার মতো চুম্বক ছুড়ে মেটাল ধরছেন একজন। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরের বেতঝুড়ি-বেড়াইদেরচালা এলাকায় লবলং খালে
ছবি: প্রথম আলো

কয়েকটি কারখানার ফাঁক গলে বয়ে চলা খালে কালো কুচকুচে দূষিত পানির স্রোত। খালের ওপর ছোট্ট একটি সেতু। সেই সেতুর নিচে পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন ৪-৫ জন। একটু পরপর কিছু একটা সামনের পানির দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন। আবার তা টেনে আনছেন। ছুড়ে দেওয়া বস্তুটি হলো বড়সড় চুম্বকের চাকতি। ছুড়ে দিয়ে টেনে তোলার পর দেখা যায়, তাতে বিভিন্ন ধাতব বস্তু লেগে আছে।

সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরের বেড়াইদেরচালা-বেতঝুড়ি সীমান্তঘেঁষা লবলং খালে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র। কিছু মানুষ প্রতিদিন এভাবে ধাতব বস্তু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, চুম্বকের সঙ্গে উঠে আসা ধাতব বস্তুকে ‘মেটাল’ নামে ডাকা হয়। স্থানীয় লোকজন এই পেশাকে ‘মেটাল ধরা’ নামে ডাকেন। চুম্বক পানিতে ছুড়ে দিয়ে চৌম্বকীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মেটালগুলো ধরেন তাঁরা। অন্তত ৩-৪টি কারখানার পরিত্যক্ত বর্জ্যমিশ্রিত পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। এসব পানির সঙ্গে বিভিন্ন ধাতব পদার্থ, যেমন নাটবল্টু, জিআই পাইপের টুকরো, ধাতুর তৈরি কৌটা, তারকাঁটা, পেরেক, যন্ত্রের ভাঙা অংশ বইতে থাকে।

খালের পানিতে চুম্বক ছুড়ে দিয়ে মেটাল ধরছিলেন আনোয়ার হোসেন নামের ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, খুব ভোরে এসে সবার আগে চুম্বক ফেলার প্রতিযোগিতা হয় তাঁদের মধ্যে। কারণ, সারা রাত বয়ে চলা পানির স্রোতের সঙ্গে প্রচুর মেটাল বা ধাতব পদার্থ এসে খালের বিভিন্ন অংশে জমা হয়। তখন মেটাল বা ধাতব পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তিনি বলেন, এসব ধাতব প্রকারভেদে ভাঙারির দোকানে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।

মেটাল ধরার পেশায় যুক্ত মো. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, প্রায় সব সময় কিছু না কিছু মেটাল খালের মধ্যে পাওয়া যায়। তা ছাড়া কারখানাগুলোর বর্জ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক পণ্য, যেমন বোতল, ড্রাম, কনটেইনার, ছোট বাক্স, বিভিন্ন যন্ত্রাংশের অপ্রয়োজনীয় অংশ পানির সঙ্গে ভেসে আসে। তাঁরা এগুলোও সংগ্রহ করেন। জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, সারা দিনে একেকজন কমপক্ষে ৪০০ টাকার মেটাল ধরতে পারেন। তিনি নিজে মেটাল ধরে বিক্রি করে তাঁর চার সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন। প্রতিদিন অন্তত সাত-আটজন খালে মেটাল ধরেন।

আবদুল জব্বার নামের এক ব্যক্তি বলেন, তাঁরা বেশ কয়েক বছর ধরেই এখান থেকে মেটাল ধরেন। স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা আছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এত দিন ধরে মেটাল ধরছি, কোনো সমস্যা তো হয় নাই।’

বৈরাগীর চালা গ্রামের আজহারুল ইসলাম বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব কাজে ঝুঁকি থাকলেও তাঁদের কিছু করার নেই। তবে হাত বা পায়ের রাবারের মোজা পরার ব্যবস্থা থাকলে ঝুঁকি এড়ানো যেত।