চুরি যাওয়া রিকশাটি ছিল সবদুলের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন

রিকশা হারিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন সবদুল হোসেন। আজ মঙ্গলবার নিজ ঘরের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

দুই মেয়ের পড়ার খরচ, সংসারের খরচ সবই চলত ব্যাটারিচালিত রিকশার আয়ে। সারা দিন রিকশা চালিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতের চালক সবদুল হোসেন। এরপর চার্জে বসিয়ে নিজে ঘুমিয়ে পড়তেন। গতকাল সোমবার রাতে তাঁর রিকশাটি চুরি হয়ে গেছে।

অসহায় সবদুল হোসেন চোখের কোনায় পানি নিয়ে বললেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রিকশাটি কিনেছিলেন। এখনো টাকা বাকি আছে। রিকশা হারিয়ে কীভাবে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করবেন আর কীভাবেই–বা পাঁচজনের সংসার চালাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না।

সবদুল হোসেন (৩৮) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের নোয়াব আলীর ছেলে। বাবা হতদরিদ্র হওয়ায় পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে অন্যের জমিতে কাজ করতে যেতে হয়েছে।

সবদুল হোসেন জানান, শারীরিক কারণে মাঠে কৃষিকাজ করতে পারেন না, তাই রিকশা চালানো শুরু করেন। প্রথম দিকে ভাড়ায় নেওয়া রিকশা চালিয়েছেন। একসময় তিনি নিজেই রিকশা কিনে চালাবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু অর্থের অভাবে কিনতে পারছিলেন না। ৩ মাস পূর্বে এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ আর নিজের জমানো ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা কেনেন। রিকশাটি ভালোই চলছিল। ১০ দিন পূর্বে ব্যাটারির সমস্যা দেখা দেয়। তখন আরেকটি এনজিও থেকে আরও ঋণ নিয়ে ঠিক করেন। রিকশা চালিয়ে তাঁর প্রতিদিন ৪০০–৫০০ টাকা আয় হতো, যা দিয়ে দুই মেয়ের পড়ার খরচ আর ৫ জনের সংসার চলত। এখন তাঁকে না খেয়ে থাকতে হবে।

সবদুল হোসেন গতকাল রাতে রিকশা চালিয়ে বাড়িতে এসে চার্জে বসিয়ে দেন। এরপর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান তাঁর একমাত্র সম্বল রিকশাটি নেই। সবদুল সারা দিন এদিক–ওদিক খুঁজে না পেয়ে কান্নকাটি করতে করতে বাড়ি ফেরেন। এ বিষয়ে তিনি কালীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান।

কালীগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সবদুল হোসেন হতদরিদ্র রিকশাচালক। এখন কীভাবে তাঁর জীবন কাটবে, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত বলে জানান।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি এখনো পাননি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।