চুয়াডাঙ্গায় চাল না দেওয়ায় কালোতালিকাভুক্ত হচ্ছে ৭৬ চালকল

চাল
ফাইল ছবি

চুক্তি অনুযায়ী সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ না করায় চুয়াডাঙ্গার ৭৬ চালকলমালিককে কালোতালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগ। এই ৭৬ চালকলমালিকের মধ্যে ৪২ জন চুক্তি অনুযায়ী আংশিক সরবরাহ করেছেন এবং ৩৪ জন কোনো চালই সরবরাহ করেননি।
জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম জানান, কালোতালিকাভুক্ত চালকলমালিকেরা পরবর্তী দুই বছর, অর্থাৎ চারটি মৌসুমে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে পারবেন না, এমন শাস্তির আওতায় আনা হতে পারে। তবে খাদ্য বিভাগের এ উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন চালকলমালিকেরা। তাঁরা বলছেন, সরকারনির্ধারিত মূল্যে গুদামে চাল দিতে গিয়ে তাঁরা লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ মৌসুমে তিনটি অটোরাইসমিলসহ জেলার ১৯৭ জন চালকলমালিক ৭ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। গত ১৩ মে চুয়াডাঙ্গা সদরের সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহের মধ্য দিয়ে অভিযান শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হলে পরবর্তীকালে তা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

চাল উৎপাদনে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা খরচ হলেও সেখানে সরকার ব্যবসায়ীদের ৩৬ টাকায় চাল দিতে বলে। সরকারের সঙ্গে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে চালকলমালিকদের একটি বড় অংশই লোকসান গুনেছেন।
আবদুল্লা শেখ, সভাপতি, চুয়াডাঙ্গা চালকলমালিক সমিতি

জেলায় ৩ স্বয়ংক্রিয় চালকলসহ ১২১ চালকলমালিক তাঁদের চুক্তি করা ৪ হাজার ৮৮৭ দশমিক ৫১০ মেট্রিক টন চালের শতভাগ সরবরাহ করেন। ৪২ জন চালকলমালিক তাঁদের ২ হাজার ১৫৪ দশমিক ১৫০ মেট্রিক টন চুক্তির বিপরীতে আংশিক ৯৮৩ দশমিক ৭৬০ মেট্রিক টন (প্রায় ৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ) সরবরাহ করেন। বাকি ৩৪ চালকলমালিক ৫৬৩ দশমিক ৩১০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করলেও এক গ্রাম চালও সরবরাহ করেননি। তাঁদের মধ্যে সদরে ১৫ জন, জীবননগরে ১০ ও আলমডাঙ্গায় ৯ জন আছেন।

এদিকে আংশিক সরবরাহকারী ও সরবরাহ না করা ৭৬ জনের কাছে লিখিত জবাব চেয়ে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক গত ২৩ সেপ্টেম্বর পত্র দেন। নির্ধারিত সময় ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৪৬ জন জবাব দেন। বাকি ৩০ জন কোনো জবাব দেননি। বেশির ভাগ চালকলমালিক লিখিত জবাবে বলেছেন, সরকারনির্ধারিত দরের চেয়ে উৎপাদন খরচ ও বাজারদর বেশি হওয়ায় সরবরাহ করেননি বা আংশিক সরবরাহ করেছেন।

অন্তত ২০ জন চালকলমালিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ অভিযানে ধানের সঙ্গে চালের দরে অসামঞ্জস্য থাকায় অভিযানে পুরোপুরি সাড়া মেলেনি। ধান থেকে চাল উৎপাদনের (সেদ্ধ, শুকানো ও ভাঙানো) জন্য প্রতি মণে ১০০ টাকা খরচ হয়। ৪০ কেজি ধানে সর্বোচ্চ ২৫ কেজি চাল পাওয়া যায়। অর্থাৎ ধানের দামের সঙ্গে উৎপাদন খরচ যোগ করে ১ হাজার ১৪০ টাকায় পাওয়া যায় ২৫ কেজি চাল। সে হিসেবে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ ৪৫ টাকা ৬০ পয়সা। ৩৬ টাকা দরে যে চাল বিক্রি করা সম্ভব নয়, সরকারিভাবে মিলগেটে প্রতি কেজি মোটা চালের দর ৪৫ টাকা ঠিক করার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা চালকলমালিক সমিতির সভাপতি আবদুল্লা শেখ জানান, প্রতি কেজি মোটা চাল উৎপাদনে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা খরচ হলেও সেখানে সরকার ব্যবসায়ীদের ৩৬ টাকায় চাল দিতে বলে। সরকারের সঙ্গে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে চালকলমালিকদের একটি বড় অংশই লোকসান গুনেছেন। তিনি দাবি করেন, চলতি মৌসুমে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে তাঁর ১২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।