চুয়াডাঙ্গায় মেয়র পদে আ.লীগের প্রার্থী বদল, সুপারিশের বাইরে বিএনপির মনোনয়ন

চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁরা চমক হয়ে এলেন দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সামনে। গত শনিবার আওয়ামী লীগের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভাতে যাঁকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল, তাঁর বদলে আজ সোমবার অন্য একজনকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে দলটি। আর বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, আজ যাঁকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি, তাঁর নাম সুপারিশই করেননি তাঁরা। শুধু তা–ই নয়, এই প্রার্থী পরাজিত হলে তার দায় কেন্দ্রকেই নিতে হবে বলে আজ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

অনেকটাই আলোচনার বাইরে থাকা দুজনকে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল থেকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার বিষয়টি আজ চুয়াডাঙ্গার প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরগরম আলোচনা চলতে থাকে। পৌর এলাকা ও এলাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে যার উত্তাপ। সবখানেই এ নিয়ে চলছে নির্বাচনী তর্কবিতর্ক ও জম্পেশ আড্ডা।

আ.লীগের প্রার্থী রিয়াজুল নন, জাহাঙ্গীর

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারকে গত শনিবার নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছিল দলটি। ওই দিন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাঁর নাম চূড়ান্ত হয়। কিন্তু আজ সোমবার জানা গেল, তাঁকে বদলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে দলটি।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে জেলার পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া আজ সোমবার বিকেলে দাপ্তরিকভাবে পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি বিকেলে নিশ্চিত হয়েছি।
জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী

দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দেশের ২৫টি পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। পরদিন রোববার সড়কপথে চুয়াডাঙ্গায় ফিরলে রাতে জেলার প্রবেশদ্বার বদরগঞ্জে দলীয় নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে রিয়াজুলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং হাজারো মোটরসাইকেল ও গাড়িবহর চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত মহড়া দেয়। সোমবার চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোয় রিয়াজুলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। কিন্তু দুপুরে বর্তমান মেয়র জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরীর (এবার মনোনয়ন চেয়ে পাননি) সমর্থকেরা শহরের বিভিন্ন স্থানে জটলা করে আনন্দ করতে থাকেন এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বদলের খবর ছড়িয়ে দেন। এরপরই বিষয়টি স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানতে পারেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এর আগে যাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে অন্য প্রতীক নিয়ে ভোট করেছেন, তাঁদের দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মুন্সী আলমগীর হান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিও শুনেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এর আগে যাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে অন্য প্রতীক নিয়ে ভোট করেছেন, তাঁদের দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে দাপ্তরিকভাবে বিষয়টি জানতে পারিনি।’

বর্তমান মেয়র জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রতীক ছিল মুঠোফোন। সেবার নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছিলেন রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার। নির্বাচনে তিনি ওবায়দুর রহমান চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।

নৌকার বিরুদ্ধে যাঁরা নির্বাচন করেছেন, তাঁদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে নির্দেশনা ছিল। এ জন্য বর্তমান মেয়র হয়েও ওবায়দুর রহমান চৌধুরী নৌকার মনোনয়ন পাননি। এদিকে শনিবার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারকে পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হলেও পরে কেন্দ্র জানতে পারে, রিয়াজুল ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। যদিও ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।

মনোনয়ন পাওয়া জাহাঙ্গীর আলম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পরপর পাঁচবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত। এবার মেয়র পদে ভোট করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে দল অন্য দুজনের সঙ্গে আমার নামটিও কেন্দ্রে পাঠায়। দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি বিকেলে নিশ্চিত হয়েছি।’

বিএনপির প্রার্থী সিরাজুল

মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আজ জেলা বিএনপির সদস্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামকে মনোনীত করেছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ সন্ধ্যায় বিষয়টি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়েছে জেলা বিএনপি। মেয়র পদের জন্য দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হকের নাম তারা সুপারিশ আকারে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল বলে জানিয়েছে।

কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সর্বসম্মতিক্রমে যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হকের নাম মেয়র পদে সুপারিশ করা হয়। যাঁর নাম পাঠানো হয়নি, সেই সিরাজুল কীভাবে মনোনয়ন পেলেন জানি না।
ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সর্বসম্মতিক্রমে যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হকের নাম মেয়র পদে সুপারিশ করা হয়। যাঁর নাম পাঠানো হয়নি, সেই সিরাজুল কীভাবে মনোনয়ন পেলেন জানি না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের দায় কেন্দ্রের। স্থানীয় বিএনপি কেন্দ্রের ভুল সিদ্ধান্তের দায় নিতে পারে না। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।