চেতনা ফিরেই বাবার কথা জানতে চায় জাহিদুল

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত শিশু জাহিদুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার সকালে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে
সত্যজিৎ ঘোষ

শরীয়তপুর সদরের ৬৪ নম্বর চিতলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (৮)। তার বাবা সায়েদ ব্যাপারী গ্যাসবেলুন বিক্রেতা। করোনার কারণে জাহিদুলের স্কুল বন্ধ। তাই বাবার সঙ্গে বেলুন বিক্রির জন্য বিভিন্ন স্থানে যায় সে।

শুক্রবার বিকেলে সদরের ডোসসার এলাকার জগৎচন্দ্র ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছিল। সেখানে বেলুন বিক্রি করতে আসেন সায়েদ ব্যাপারী। সঙ্গে নিয়ে আসেন ছেলে জাহিদুলকে। বেলুনে গ্যাস ভরার সময় আকস্মিকভাবে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সায়েদের মৃত্যু হয়। এতে আহত হয়েছে ছেলে জাহিদুল ও সিয়াম নামের পাঁচ বছরের আরেক শিশু। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সিয়ামকে নেওয়া হয় ঢাকায়। আর জাহিদুলকে ভর্তি করা হয়েছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে।

বিস্ফোরণে জাহিদুলের দুই পা ও বুক ঝলসে গেছে। ছোট শরীরের অধিকাংশ অংশই ব্যান্ডেজে মোড়ানো। যন্ত্রণায় ছটফট করছে হাসপাতালের শয্যায়। অচেতন জাহিদুল চেতনা ফিরে পেয়েই বাবার কথা জানতে চায়। তবে পরিবারের সদস্যরা এখনো তাকে বাবার মৃত্যুর খবর জানাননি।

জাহিদুলদের বাড়ি সদরের চিতলিয়া ইউনিয়নের দরিহাওলা নয়াকান্দি গ্রামে। তাঁর বাবা সায়েদ ব্যাপারী আট বছর ধরে মেলা, হাটবাজার, পার্ক ও স্কুল-কলেজের মাঠে বেলুনে গ্যাস ভরে তা বিক্রি করে আসছিলেন। বাড়িতে বসেই চুন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে সিলিন্ডারে গ্যাস তৈরি করতেন সায়েদ। গতকাল সেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা গেলেন তিনি।

আজ শনিবার সকালে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জাহিদুলের স্বজন ও গ্রামের মানুষ হাসপাতালে জড়ো হয়েছেন। তার মা রোকসান আক্তার একবার ছেলের শয্যার পাশে ছুটে যান, আবার বিলাপ করতে করতে মর্গের সামনে স্বামীর নিথর দেহের কাছে আসেন। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন জাহিদুলের পরিবারকে ৩৫ হাজার ও সিয়ামের পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা সহায়তা হিসেবে দিয়েছে।

আক্ষেপ করে জাহিদুলের মা রোকসানা আক্তার বলেন, ‘ছেলেটি ফুটবল খেলা দেখতে বাবার সঙ্গে গিয়েছিল। একটি দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। আমার দুই শিশুসন্তান নিয়ে এখন কোথায় দাঁড়াব?’

বিস্ফোরণে জাহিদুলের দুই পা ও বুক ঝলসে গেছে। ছোট শরীরের অধিকাংশই ব্যান্ডেজে মোড়ানো। যন্ত্রণায় সে ছটফট করছে হাসপাতালের বিছানায়। শনিবার সকালে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে
প্রথম আলো

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে জাহিদুল জানায়, তার বাবা স্কুলমাঠে প্রবেশপথের এক কর্নারে বসে বেলুনে গ্যাস ভরছিলেন। সিলিন্ডারটি গরম হয়ে গিয়েছিল। সেটি পানি দিয়ে ঠান্ডা করার কথা বলেছিলেন তার বাবা। এমন সময় হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারটি বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আর কিছু মনে নেই তার।

চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, পরিবারটি হতদরিদ্র, অভাবের কারণেই এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতেন সায়েদ ব্যাপারী। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শরীয়তপুর–১ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করেন। শিশু দুটির চিকিৎসার তদারকি করেন। ওই পরিবারকে সহায়তা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, তাঁদের সঙ্গে ডোমসার গ্রামের দেলোয়ার মাতুব্বরের ছেলে সিয়াম মাতুব্বর আহত হয়েছে। ওই শিশু বেলুন কেনার জন্য সেখানে যায়। সে গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর নিহত সায়েদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।