চেষ্টা করেও সাগরে ফেরানো যায়নি ডলফিনটিকে, মারা গেল উপকূলেই

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় আন্ধারমানিক নদের মোহনায় ভেসে আসা ডলফিন
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লেম্বুরচরসংলগ্ন আন্ধারমানিক নদের মোহনায় ভেসে আসার দুই ঘণ্টা পর একটি ডলফিন মারা গেছে। স্থানীয় জেলেরা বলেন, আজ রোববার সকালের জোয়ারে ডলফিনটি ভেসে আসে। সকাল সাতটার দিকে এটি সবার নজরে আসে। এরপর সকাল ৯টার দিকে ডলফিনটি মারা যায়।

কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির দলনেতা রুম্মান ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, সকালের জোয়ারে ডলফিনটি ভেসে আসার পর লেম্বুরচরসংলগ্ন আন্ধারমানিক নদের মোহনায় আটকা পড়ে। এ সময় ডলফিনটি ছটফট করছিল। এটি ইরাবতী প্রজাতির স্ত্রী ডলফিন। এর দৈর্ঘ্য সাত ফুট এবং প্রস্থ দুই ফুটের মতো। ডলফিনটির পেটে বাচ্চা ছিল। এটির শরীরের নিচের অংশ থেকে রক্ত ঝরছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে ট্রলিং জালে (মাছ ধরার বিশেষ ধরনের জাল) অথবা ট্রলিং বোটের পাখার সঙ্গে লেগে ডলফিনটি আঘাত পেয়েছে। পেটে বাচ্চা থাকায় হয়তো প্রসব বেদনা উঠে যাওয়ায় ভাসতে ভাসতে এটি কিনারায় চলে আসে।

কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কে এম বাচ্চু বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা চারজন ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় দেখতে পাই ডলফিনটি এপাশ-ওপাশ করে ছটফট করছিল। আমরা কাছে গিয়ে আদর-যত্ন করে চারবার এটিকে সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দিই। কিন্তু বারবার ডলফিনটি কিনারায় ফিরে আসছিল। আমাদের চোখের সামনে ছটফট করতে করতে দুই ঘণ্টা পর এটি মারা যায়। আমরা কিছুই করতে পারছিলাম না, অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। চোখের সামনে বন্ধু প্রাণী ডলফিনের এ রকম করুণ মৃত্যু দেখে আমরা খুব ব্যথিত হয়েছি।’

ডলফিনটিকে চারবার সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও সাগরের নীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ প্রকল্পের পটুয়াখালী জেলার সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সাতজন লোক দিয়ে ডলফিনটি তুলে কুয়াকাটায় নিতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি। স্থানীয় লোকজন ধারণা করে বলছেন, এটির ওজন ১০০ কেজির মতো হতে পারে।’ তিনি বলেন, মৃত ডলফিনটি তাঁরা আলীপুর মৎস্য বন্দরের ল্যান্ডিং স্টেশনে নিয়ে যাচ্ছেন। আজ আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ দিবস। এ দিবস উপলক্ষে ডলফিনটি সর্বসাধারণের দেখার জন্য প্রদর্শন করা হবে। এরপর ডলফিনটির মৃত্যুর কারণ জানতে এটিকে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পটুয়াখালী বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে লোকজন পাঠিয়েছেন তিনি। ডলফিনটি নিয়ে কী করা যায়, তা ভাবা হচ্ছে।