চোখ মেলে চেয়েছে সূর্য, তবে শীত খুব কমেনি

ঘন কুয়াশা ও মেঘ কেটে যাওয়ায় পাঁচ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার রংপুরের আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। এতে শীতার্ত মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। একই দিন পঞ্চগড়, দিনাজপুর, গাইবান্ধায়ও চোখ মেলে চেয়েছে সূর্য। তবে এতে এসব অঞ্চলে শীত খুব একটা কমেনি।
কয়েক দিন পর রংপুরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে সূর্যের দেখা মেলে। এতে শীতার্ত মানুষ কিছুটা স্বস্তি বোধ করে। নগরের প্রতিটি এলাকায় দোকানসহ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষের রোদে দাঁড়িয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা যায়। বাসাবাড়ির ছাদ ও আঙিনায় কাপড় শুকাতে দেন গৃহিণীরা। কোলের শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অনেকে।
রংপুর আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন রংপুরের আকাশে মেঘ ও কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা যাওয়া যায়নি। সঙ্গে ছিল কনকনে ঠান্ডা বাতাস। গতকাল রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের তাপ ছিল। ঠান্ডা বাতাসও ছিল না। তাই শীত কিছুটা কম অনুভূত হয়েছে।
গাইবান্ধার আকাশে গতকাল সকাল ১০টার দিকে চোখ মেলে সূর্য। বিকেল চারটা পর্যন্ত ছিল রোদের ঝিলিক। তবে তাতে শীতের তীব্রতা খুব কমেনি। দুপুরে শীত কম অনুভূত হলেও সকাল ও বিকেলে তীব্রতা বেশি ছিল। বিকেলের পর শহরে মানুষের চলাচল কমে যায়। সন্ধ্যার পর শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। রাতে কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় পথঘাট।
শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। প্রায় প্রতিদিনই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গবাদিপশুও বিপাকে পড়েছে। নদীর চরাঞ্চলের মানুষ শীতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুরে কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় সকাল। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উঁকি দেয় সূর্য। মাঝেমধ্যে রোদের ঝলকানি দেখা দিলেও দিনভর শীতের প্রকোপ কমে না। মিষ্টি রোদের সঙ্গে থাকছে মৃদু বাতাস। গতকালও এমন আবহাওয়া বিরাজ করে।
শীতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী লোকজন, বিশেষ করে কৃষিশ্রমিকদের ভোগান্তি বেশি। শীতের মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের।
দিনাজপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গতকাল এখানে তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী সোমবার পর্যন্ত দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সোমবারের পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির পর শৈত্যপ্রবাহের দেখা দেবে।
গতকাল সকাল নয়টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিনও একই সময়ে এখানে একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার একই সময়ে এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
হিমালয়ের কাছের এই জেলার ওপর দিয়ে কয়েক দিন ধরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে স্থবির জনজীবন। রাতে বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। এতে খেটে খাওয়া লোকজন বেশি অসুবিধায় পড়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এখানে সূর্যের দেখা মেলে। বিকেল চারটা পর্যন্ত রোদ ছড়ায়। তবে উত্তর-পশ্চিমের হিমেল বাতাসের কারণে তা তীব্রতা ছড়াতে পারেনি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, আকাশে মেঘ না থাকায় গত দুই দিন এখানে সূর্যের দেখা যাওয়া গেছে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর এবং প্রতিনিধি, গাইবান্ধা, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়]