চোখের অস্ত্রোপচার বন্ধ, নষ্ট হচ্ছে যন্ত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল
ফাইল ছবি

২৫০ শয্যার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পদটি শূন্য। এতে বন্ধ আছে অস্ত্রোপচার ও রোগীদের রাখার ওয়ার্ড। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম কোটি টাকা দামের যন্ত্রপাতি। অস্ত্রোপচার ও অপেক্ষাকৃত জটিল রোগীদের পাঠানো হচ্ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের অক্টোবরে চক্ষু বিভাগে সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন চিকিৎসক ইয়ামলি খান। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পদোন্নতি পেয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বদলি হন। এর এক থেকে দেড় বছর পর আল আমিন নামের এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগ দেন। কিন্তু মাসখানেক পর তিনিও বদলি হয়ে যান। এরপর থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদটি শূন্য।

এদিকে চিকিৎসক না থাকায় তিন বছর ধরে হাসপাতালে চোখের ছানিসহ অন্যান্য রোগের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে চোখের রোগীদের শুধুমাত্র দৃষ্টি ও চশমা পরীক্ষার সেবা দেওয়া হচ্ছে।

জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতালটিতে নাক, কান ও গলার সিনিয়র কনসালট্যান্টের পদটিও শূন্য। পাঁচ বছর ধরে বড় ধরনের অস্ত্রোপচারও বন্ধ আছে। এক বছর আগে শূন্য হয়েছে সহকারী পরিচালকের পদ। সাত মাস ধরে বিকল ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন।

২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক দ্য ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের দুস্থ মানুষের চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালটিতে সরঞ্জাম দেয়। চক্ষু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১-০৭ পর্যন্ত হাসপাতালে ৬৯৬, ২০০৮-১৩ পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০১ এবং ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৯৯ রোগীর চোখের ছানির অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০১৮ সালে অস্ত্রোপচার হয় ৩ হাজার ৭৮৮ জনের।

১৩ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ দিনে হাসপাতালের তৃতীয় তলার বহির্বিভাগের চক্ষু ওয়ার্ডে দুই চিকিৎসা কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা ও সফিকুল ইসলাম চোখের সমস্যা নিয়ে আসা ৬৫১ জন রোগীকে সাধারণ সেবা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার চোখ পরীক্ষা করিয়েছেন ২৩ জন। কিন্তু দৃষ্টি পরীক্ষার জন্য চক্ষু ওয়ার্ডে থাকা দুটি স্লিট ল্যাম্পের একটি অকেজো হয়ে গেছে। অপরটি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া দ্রুত সঠিক লেন্স বা চশমা নির্ধারণ করার যন্ত্রটিও নষ্ট হয়ে গেছে।

ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কক্ষের কোটি টাকা দামের দুটি লেজার মেশিন, কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফি ও ওসিটি মেশিনও দীর্ঘ তিন বছর ধরে ব্যবহার না করায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব যন্ত্র দিয়ে ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রেটিনায় সমস্যা হয়েছে কি না, তা নির্ণয় করা হয়।

চিকিৎসা কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ২০-৩০ শতাংশ রোগীই চোখের ছানির অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে আসেন। দুটি স্লিট ল্যাম্পের একটি অকেজো ও অন্যটির লাইট নষ্ট হওয়ায় চোখ পরীক্ষা করতে সমস্যা হয়। ভালো রিডিং আসে না।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রানা নুরুস শামস বলেন, হাসপাতালে চক্ষু বিভাগের জন্য জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্টের দুটি পদ রয়েছে। দুটি পদই শূন্য। তিন বছর ধরে এ পর্যন্ত ১০-১৫ বার চিকিৎসক পদায়নের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগেও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। কাজ হয়নি। অপর দিকে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।