চোখের সামনে বসতভিটা নদীতে, যমুনাপাড়ে কান্নার রোল

মুহূর্তে যমুনায় বিলীন হয়ে যায় পাঁচটি বসতভিটা ও দুটি তাঁত কারখানা। সোমবার দুপুরে চৌহালী উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ পাকা রাস্তার মাথায়
ছবি: প্রথম আলো

চোখের সামনে বসতভিটা নদীতে চলে যাচ্ছে। কেউ ঘরের খুঁটি, কেউবা টিনের চাল সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। নারীরা কাপড়চোপড়, বিছানা ও রান্নার জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। এসব দেখে যমুনাপাড়ে বয়স্ক ও শিশুদের কান্নার রোল পড়ে যায়।

সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ পাকা রাস্তার মাথায় নদীভাঙন এলাকায় এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নদীভাঙনে স্থানীয় কৃষক আমোদ আলী, আবুল কালাম, রুহুল আমিন, তারা মিয়া ও ইদ্রিস আলীর ঘর বিলীন হয়ে গেছে। ইদ্রিস আলী তাঁত কারখানাও হারিয়েছেন। নদীতে গেছে শাহ আলম নামের এক ব্যক্তির তাঁত কারখানাও।

স্থানীয় ব্যক্তি ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণাবর্তের কারণে জেলার চৌহালী উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ পাকা রাস্তার মাথায় মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় পাঁচটি বসতভিটা ও দুটি তাঁত কারখানা। এ ছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে সোমবার বিকেলে সেখানে দেখা গেছে, নদীভাঙনের আতঙ্কে নদীপাড়ের লোকজন তাঁদের বসতবাড়ি অন্যত্রও সরিয়ে নিচ্ছেন। এ সময় কথা হয় স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে। স্থানীয় প্রবীণ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এর আগে যমুনা নদীতে দফায় দফায় পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় একাধিকবার ভাঙন হয়েছে। কয়েক দিন ধরে নদীতে পানি স্থিতিশীল থাকায় ভাঙন বন্ধ ছিল। হঠাৎ করে আজ দুপুরে নদীতে স্রোত ও ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়। এতে পাঁচটি বসতভিটা ও দুটি তাঁত কারখানা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

ভাঙনে বসতভিটা ও তাঁত কারখানা হারিয়েছেন স্থানীয় ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ‘নদীভাঙনে আমাদের সব শেষ। এখন কোথায় যাব, কোথায় বসতবাড়ি তৈরি করব, ভেবে পাচ্ছি না।’

নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বিশেষ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কালাম মোল্লা। তিনি বলেন, ‘নদীভাঙনের ব্যাপকতা দেখে আমরা হতবাক। একদিকে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে, অন্যদিকে হঠাৎ করে পাঁচটি বসতভিটা ও দুটি তাঁত কারখানা নদীতে চলে গেছে। এতে সবাই শঙ্কিত। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেওয়ানগঞ্জের নদীভাঙনে বসতভিটা বিলীনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’