চোরাচালানের কারণেই সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটছে: বিক্রম দোরাইস্বামী

দিনাজপুর শহরের রায়সাহেব বাড়ি শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দির মাল্টিপারপাস কমিউনিটি মিলনায়তনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, সীমান্ত হত্যা একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। সীমান্ত হত্যা বন্ধে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে। সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। কারণ, এই চোরাচালানের কারণেই সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটছে। আগামী দিনে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ ব্যাপারে ভারত সরকার সজাগ রয়েছে।

আজ সোমবার সকালে দিনাজপুর শহরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

সেখানে তিনি শহরের রায়সাহেব বাড়ি লোকনাথ মন্দির মাল্টিপারপাস কমিউনিটি মিলনায়তনের উদ্বোধন করেন। ভারত সরকারের অর্থায়নে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়।

এ উপলক্ষে ওই মিলনায়তনে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি সমর কুমার দাসের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন দিনাজপুর-১ আসনের সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাট্টি, দিনাজপুর রায়সাহেব দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট চিত্ত ঘোষ, মাল্টিপারপাস কমিউনিটি হলের সদস্য বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ।

এরপর দুপুরে কাহারোল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দির ও দীপ্ত জীবন ফাউন্ডেশন হাসপাতাল পরিদর্শন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার।

‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কটা মুক্তিযুদ্ধের’

সোমবার বিকেলে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার রামকলায় অবস্থিত রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে নির্মিত দুটি বহুতল ভবনসহ আশ্রমের বিভিন্ন অবকাঠামোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিক্রম দোরাইস্বামী। ভারত সরকারের অর্থায়নে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার রামকলায় রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে বিভিন্ন অবকাঠামোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীসহ অন্যরা
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কটা মুক্তিযুদ্ধের। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করা, মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা এবং সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করা, ট্রেনিং দেওয়া, অস্ত্র দেওয়া, এগুলো সব ভারত করেছে।’

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও বলেন, ‘মুজিবনগর সরকারের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। নিউইয়র্কে থাকার কারণে ভারত সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচয় হয়েছিল। সে সময় জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে একটি বিক্ষোভ করার প্রস্তুতি নিলে মাত্র ২০ জন বঙ্গসন্তানকে জোগাড় করতে পেরেছিলাম। সেখান থেকে আজ স্বাধীনতার সুফলে সারা দেশের হাজার হাজার অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। এই যে একটা বিরাট পরিবর্তন বাংলাদেশে এসেছে, এটা কিন্তু স্বাধীনতার ফলে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহীতে নিযুক্ত সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটি, দিনাজপুর-১ আসনের সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল, ফরিদপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী সুরবরানন্দজি মহারাজ, দিনাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী বিভাত্মানন্দজি মহারাজ, খানসামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সফিউল আলম চৌধুরী, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম রামকলার সভাপতি মতিন্দ্র নাথ রায়, উপদেষ্টা কমলাকান্ত রায় প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন রংপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী সন্ততানন্দজি মহারাজ।

‘সীমান্তে প্রাণহানি চায় না ভারত’

নীলফামারীর সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী
ছবি: প্রথম আলো

সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুরের গোলাহাটে বধ্যভূমি পরিদর্শনে যান ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারত-বাংলাদেশ ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। তাই সব সময় ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। ভারত কখনো সীমান্তে প্রাণহানি চায় না। বিএসএফকে নির্দেশনা দেওয়া আছে গুলি না চালানোর জন্য।

ভারতীয় হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা চাই, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করবে এবং সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা প্রাণহানি শূন্যে নেমে আসবে।’

এ সময় নীলফামারীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ সৈয়দপুর শাখার সভাপতি রাজকুমার পোদ্দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।