ছবি ভাইরাল, তবে ওই দিন টিকা নেননি চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় করোনাভাইরাসের গণটিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়েছে গত রোববার। ওই দিন সাংবাদিকদের সামনে নার্সরা উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক হোসেনকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করছেন এমনটাই তখন দেখা যায়। কিন্তু পরে জানা যায়, ফটোসেশনের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান এমন ভান করেছেন। আসলে ওই দিন তিনি টিকাই নেননি। তাঁর এ কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিলে আজ বৃহস্পতিবার অবশেষে তিনি সত্যি সত্যি টিকা নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন বক্তৃতা শেষে প্রথম টিকা গ্রহণের নামে ‘মিথ্যা নাটক’ মঞ্চস্থ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই টিকা নিতে ভয় করেছেন। তাহলে প্রথম টিকা নেওয়ার মিথ্যা নাটক মঞ্চায়ন কেন? উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন কাণ্ডে যমুনা চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের অনেকে ভীত হয়ে টিকা গ্রহণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে অভিযোগ ওঠে। আজ টিকা নেওয়ার ব্যাপারেও অনেকে বলেন, চার দিন ধরে চারপাশের টিকাগ্রহীতাদের কী হয় আগে দেখলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এখন মনে হয় সাহস পেয়েছেন।
নার্সরা উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক হোসেনকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করছেন এমনটাই তখন দেখা যায়। কিন্তু পরে জানা যায়, ফটোসেশনের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান এমন ভান করেছেন। আসলে ওই দিন তিনি টিকাই নেননি।
চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল কাদের বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী করোনার টিকা প্রদানের কার্যক্রম উদ্বোধন হয়। সেই সুবাদে চৌহালীতে টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন। কিন্তু টিকা গ্রহণের পর এক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হয় জেনে ওই দিন তিনি টিকা গ্রহণ না করে শুধু ফটোসেশন করেছিলেন। তবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে টিকা গ্রহণ করেছেন। তাঁর টিকা গ্রহণের অনলাইন আবেদন কার্ডও রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, উদ্বোধনের দিন চিকিৎসক ও নার্সসহ সাতজন টিকা গ্রহণ করেছেন। এরপর ৮ তারিখে কেউ টিকা গ্রহণ করেননি। ৯ তারিখে ৯ জন টিকা গ্রহণ করেছেন। ১০ তারিখে একজনও করেননি। আজ ১১ তারিখে ৮ জন গ্রহণ করেছেন। এ নিয়ে উপজেলায় মোট টিকা গ্রহণ করেছেন ২৪ জন। সংখ্যাটি অবশ্য বেশি নয় বলতে হবে।
টিকাদানের উদ্বোধনী দিন হাসপাতালের নার্সরা আমাকে দিয়ে সবাইকে বোঝাচ্ছিলেন কীভাবে টিকা নিতে হবে। এর মধ্যে কে ভিডিও করেছে আমি জানি না। আমি যদি টিকা নেওয়ার ব্যাপারে কাউকে সাহস জোগাই, সেটা কি অপরাধ?
জানতে চাইলে চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকাদানের উদ্বোধনী দিন হাসপাতালের নার্সরা আমাকে দিয়ে সবাইকে বোঝাচ্ছিলেন কীভাবে টিকা নিতে হবে। এর মধ্যে কে ভিডিও করেছে আমি জানি না। তবে আমি আজ টিকা নিয়েছি।’ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ও সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যদি টিকা নেওয়ার ব্যাপারে কাউকে সাহস জোগাই, সেটা কি অপরাধ?’
সিভিল সার্জন জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান টিকা গ্রহণের নামে ভান করেছেন, বিষয়টি জেনেছি। তবে তিনি ইতিমধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন। তা ছাড়া ওই উপজেলায় টিকা গ্রহণের সংখ্যা এখন পর্যন্ত খুবই কম। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামীকাল থেকে ওই উপজেলার প্রতিটি মসজিদে টিকা গ্রহণের প্রচারণার মাধ্যমে সব শ্রেণির মানুষকে উৎসাহিত করা হবে।’