ছাত্ররাজনীতি চান না কুয়েট শিক্ষকেরা

শিক্ষকদের একটি অংশ বলছে, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে বরং সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার দরকার।

সেলিম হোসেন

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে সব বিবেচনায় শিক্ষার পরিবেশের উন্নতি হবে বলে মনে করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক সমিতি। শিক্ষকেরা বলছেন, ছাত্রসংগঠনগুলো এখন যেসব কাজ করছে, তা মোটেও ছাত্রসুলভ কাজ নয়। ছাত্ররাজনীতির নামে নানা অপকর্ম হচ্ছে। ভিন্নমতের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে।

অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের (৩৮) মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েট শিক্ষকেরা ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, কুয়েট ছাত্রলীগের কিছু নেতা–কর্মীর মানসিক নিপীড়নের কারণে অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যু হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর মারা যান তিনি।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, পরদিন ১ ডিসেম্বর জরুরি সভায় অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ মোট সাত দফা দাবির বিষয়ে একমত হয় শিক্ষক সমিতি। অন্য দাবিগুলোর একটি ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। তবে শিক্ষকদের একটি অংশ বলছে, ছাত্ররাজনীতি পুরো বন্ধ না করে বরং ছাত্রসংগঠনের সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার দরকার।

শিক্ষক সমিতি সূত্র জানায়, তাদের সাত দফাসংক্রান্ত গৃহীত প্রস্তাবের অনুলিপি ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেওয়া হয়। পরদিন ২ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসের ‘দুর্বার বাংলা’র পাদদেশে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেও তাঁরা একই দাবি তোলেন।

কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ (প্রভোস্ট) নানাভাবে হেনস্তা হয়েছেন। ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীদের চাপে পড়তে হয়েছে তাঁদের। কেউ কেউ বাধ্য হয়েছেন দায়িত্ব ছেড়ে দিতে। প্রশাসনকে জানিয়েও অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়া যায়নি। কখনো কখনো হলের ভেতরেই সমঝোতার চেষ্টা হয়েছে। এবার অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর পর তারা সরব হয়েছে।

কুয়েটের একাধিক হলে প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রসংগঠনের নেতারা নিয়মের বাইরে অনেক কিছু করতে চান। হল পরিচালনা কমিটিতে তাঁরাই থাকেন। তাঁদের মধ্যে আবার গ্রুপিং থাকে। সিট বণ্টন ও হলের ব্যবস্থাপনা নিয়ে মূলত চাপ তৈরি করা হয়। সিট বণ্টন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের বাইরে করার সুযোগ থাকে না।

কুয়েটের একজন প্রভাবশালী শিক্ষক বলেন, ভাবনার বিষয় হচ্ছে আগে চাপ হলকেন্দ্রিক থাকলেও এখন চাপ একাডেমিক বিল্ডিংয়েও চলে এসেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অধ্যাপক বলেন, ছাত্ররাজনীতির নামে নানা অপকর্ম হচ্ছে। কোনো ধরনের সহাবস্থান নেই। তাঁদের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ভিন্নমতের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবির পক্ষে প্রায় সব শিক্ষক মত দিয়েছেন বলে জানান কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস।

তবে কুয়েটের ছাত্রকল্যাণবিষয়ক সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সোবহান মিয়া বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, ছাত্ররা অছাত্রসুলভ আচরণ না করে সুষ্ঠু রাজনীতি করুক, এটা আমার চাওয়া।’

প্রসঙ্গত, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩–এর ৪৪(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা–কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হতে পারেন না। তবে এতে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

সুষ্ঠু তদন্ত দাবি

অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কও একই দাবি জানিয়েছে।