ছিন্নমূল মানুষের মৌসুমি ফল খাওয়ার ইচ্ছেপূরণ

সিলেটের সামাজিক সংগঠন ‘মানব মন্দির’ এর উদ্যোগে পথশিশু ও রেলস্টেশন এলাকার ছিন্নমূল মানুষদের মৌসুমি ফল খাওয়ানো হয়।
ছবি: প্রথম আলো

মৌসুমি ফল দেখে তাঁদের মনে খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু কেনার সামর্থ্য না থাকায়, তাঁরা তা খেতে পারেন না। বিষয়টি বুঝতে পেরে সিলেটের একটি সংগঠন তাঁদের মৌসুমি ফল খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ করেছেন। ছিন্নমূল মানুষ ও পথশিশুদের জন্য মৌসুমি ফল খাওয়ার এ আয়োজন করা হয় আজ শুক্রবার সিলেট রেলস্টেশনে।

শুক্রবার দুপুরের পর থেকে বেশ কয়েক তরুণ স্টেশনে আম, কাঁঠাল, আনারস কেটে একটি ঝুড়িতে রাখছিলেন। বেলা তিনটার দিকে ফলগুলো কাটার পর ঝুড়িগুলো রেলস্টেশনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থালায় সাজিয়ে পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সিলেটের সামাজিক সংগঠন ‘মানব মন্দির’ মৌসুমি ফল পরিবেশনের এ আয়োজন করে।

জানা গেছে, মানব মন্দির ২০১০ সাল থেকে ছিন্নমূল মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। সম্প্রতি সংগঠনটি একটি বৃদ্ধাশ্রম ও স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এর আগে থেকেই সিলেট রেলস্টেশন এলাকায় পথশিশুদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। এতে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী নিয়মিত শিশুদের পড়ালেখা শেখান। তবে করোনার কারণে এখন পড়ালেখা শেখানোর কাজ বন্ধ রয়েছে।

আজ বেলা তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট রেলস্টেশন এলাকার ছিন্নমূল মানুষ ও শিশুরা সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া থালা হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে। এ সময় সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা মৌসুমি ফল আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস তাঁদের থালায় তুলে দিচ্ছেন। ফলগুলো পেয়ে তাঁদের চোখে-মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

মৌসুমি ফল বিতরণে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে সংগঠনটির সদস্যদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঝুটন সূত্রধর, সামাদ মিয়া, তুষার চৌধুরী, পলাশ রঞ্জন দে, অজিতাভ আচার্য, জুয়েল আহম, খোকন দাস ও শুভ্র চক্রবর্তীকে।
ফল খাওয়ার পর আমির মিয়া (১৪) নামের এক শিশু বলে, ‘অনেক ফল দেওয়া হয়েছে। আমি এতগুলো ফল আগে খাইনি। বাজারে সেগুলো বিক্রি করতে দেখেছি। কিন্তু দামের কারণে কিনে খেতে পারিনি। আজ অনেকগুলো ফল একসঙ্গে খেতে পেরেছি।’
জায়েদা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘রেলস্টেশন এলাকায় আমরা থাকি। এখানে ফেরি করে অনেকে ফল বিক্রি করে। তবে সেগুলোর যে দাম, সে দামে তিন কেজি চাল কেনা যাবে। এ জন্য ফল কিনে খাওয়া হয় না। তবে আজ একসঙ্গে কয়েক ধরনের ফল খাওয়ার সুযোগ হয়েছে।’

মানব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি নিজেও একসময় রেলস্টেশনে টানা তিন দিন কাটিয়েছি। এখন আমি সেখান থেকে অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। তবে মন পড়ে রয়েছে সেখানেই। পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট আমি বুঝি। ছিন্নমূল মানুষেরা অভাবের কারণে মৌসুমি ফল খাওয়ার সুযোগ পান না। রেলস্টেশনে থাকা ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে এক দিন হলেও আনন্দ দেওয়ার জন্য এমন আয়োজন।’