ছেলেদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ গেল মায়ের

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সন্ত্রাসীদের হামলায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তাঁর তিন ছেলের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়
প্রথম আলো

ঘরের মধ্যে তখনো লুকিয়ে আছেন তাঁর দুই সন্তান। আর হামলাকারীরা তাঁদের খুঁজতে ঘরে ভাঙচুর চালাচ্ছে। এ অবস্থায় ছেলেদের রক্ষার জন্য দরজায় এগিয়ে গিয়েছিলেন মা সুফিয়া খাতুন (৬০)। ছেলেদের না দেখে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র ফালার দিয়ে আঘাত করে তাঁকে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।

গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জের ধরে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটবাড়িয়া গ্রামে সোমবার ভোরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ও হামলাকারী উভয় পক্ষই আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত সুফিয়ার তিন ছেলের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ সময় কমপক্ষে তিনজন আহত হয়েছেন।

গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, উপজেলা নির্বাচনের সময় থেকে সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে ছাত্রলীগের শৈলকুপা উপজেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার কায়সারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। জুলফিকার গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে তিনি হেরে যান।

নিহত সুফিয়া খাতুন
সংগৃহীত

এই বিরোধের জের ধরে ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভাটবাড়িয়া গ্রামের কারিকর পাড়ায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। নিহত সুফিয়া জালাল উদ্দিনের স্ত্রী। তাঁদের তিন ছেলে বিল্লাল বিশ্বাস, হীরক বিশ্বাস ও লিটন বিশ্বাস। তাঁরা জুলফিকারের সমর্থক ছিলেন।

নিহত নারীর পুত্রবধূ অঞ্জনা খাতুন বলেন, ঘটনার সময় বাড়ির অনেকে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁর শ্বশুর উঠে চা খেতে গ্রামের এক দোকানে যান। এমন সময় শতাধিক মানুষ হাতে লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা বাড়ির টিনের গেটটি ভেঙে হীরককে খুঁজতে থাকে। তাঁকে না পেয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করতে শুরু করে। ঘটনার সময় তাঁর স্বামী লিটন বাড়ির বাইরে ছিলেন। কিন্তু হীরক ও বিল্লাল বাড়িতেই ছিলেন। সন্ত্রাসীদের গেট ভাঙচুর করতে দেখে তাঁরা চাচাতো ভাই জাহিদুল ইসলামের ঘরে লুকিয়ে পড়েন। তাঁর শাশুড়ি সুফিয়া খাতুনও ছেলেদের রক্ষায় ওই ঘরে ছুটে যান। এ সময় তাঁরা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন।

হামলাকারীরা জাহিদুল ইসলামের ঘর ভাঙচুর শুরু করলে তাঁরা এক কোনায় আশ্রয় নেন। সন্ত্রাসীরা ওই ঘরের চারপাশের টিনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ঘরে ধারালো ফালা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তাঁর শাশুড়ি ছেলেদের বাঁচাতে দরজার কাছে ছুটে যান, তখনই সন্ত্রাসীরা ফালা বসিয়ে দেয় তাঁর বুকে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর শাশুড়িকে হত্যার পরও সন্ত্রাসীরা থামেনি, তারা ভাঙচুর লুটপাট করতে থাকে। এমন সময় পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনে তারা পালিয়ে যায়।

হীরক বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁরা নৌকার পক্ষে কাজ করেন। তিনি এই ওয়ার্ডের নৌকা প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিলেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করার পর থেকে তাঁদের ওপর নির্যাতন চলছে। তাঁরা ঠিকমতো বাড়িতে থাকতে পারেন না। তিনি নিজেও দীর্ঘদিন ঢাকায় পালিয়ে ছিলেন। এরপর তাঁরা ইউপি নির্বাচনে জুলফিকারের পক্ষ নেন। সে ঘটনার জের ধরে অপর পক্ষের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ বাড়ে। অল্পদিন হলো বাড়িতে এসেছেন। এর মধ্যে হামলা চালানো হলো।

জুলফিকার কায়সার জানান, উপজেলা নির্বাচন থেকে ওই পরিবারটিকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানো হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত একজন বৃদ্ধাকে হত্যা করা হলো।

বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান বলেন, যারা হামলা করেছে তারা কেউ তাঁর লোক না। ঘটনাটি তাঁদের নিজেদের মধ্যে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদ জানান, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।