‘ছেলের একটা ঠিকানা হলো’

আফরোজা খাতুনের কোলে শিশু জুনায়েদ। গতকাল মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে আফরোজা খাতুনের (২০) স্বামী খুন হয়েছিলেন। তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন তিনি। তবে সরকারি বরাদ্দের ঘর পেয়ে তিনি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ আফরোজা খাতুন। গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে গৃহহীন মানুষের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাগুরা জেলায় ঘর পেয়েছে ২০২টি পরিবার।

গতকাল ঘরের কাগজপত্র বুঝে নিতে তিন বছরের শিশু ছেলে জুনায়েদকে সঙ্গে নিয়ে সদর উপজেলা চত্বরে এসেছিলেন আফরোজা খাতুন। এ সময় তিনি বলেন, ‘স্বামী নেই। আমাদের জায়গা জমি নেই। এখন ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো। আমার ছেলের একটা ঠিকানা হলো।’

আফরোজা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর স্বামী আজিজুর রহমান একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানিতে (এমএলএম) চাকরি করতেন। যেখানে বায়ো স্প্রে–জাতীয় পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর নির্ভর করত মাসিক আয়রোজগার। গত বছরের ৬ জুন পাওনা মাত্র আড়াই হাজার টাকা আদায় করতে গিয়ে খুন হন আজিজুর। ওই ঘটনায় চাউলিয়া গ্রামের আশরাফ আলী (৩৩) নামের এক যুবককে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে। তিনি হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ওই যুবক এখন কারাগারে রয়েছেন।

আফরোজার মতো মানুষেরই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এখন ছেলেকে নিয়ে সে নিজের ঘরে থাকতে পারবে।
ইয়াসিন কবির, ইউএনও, মাগুরা সদর উপজেলা

আফরোজা খাতুন জানান, অল্প বয়সে মা–বাবা হারিয়ে নানার বাড়িতে বড় হন তাঁর স্বামী আজিজুর। তাঁদের জায়গা-জমি ছিল না। তিনি (আফরোজা খাতুন) নিজেও বড় হয়েছেন পালিত মা–বাবার কাছে। স্বামীর মৃত্যুর পর এখন সন্তান নিয়ে সেই মা-বাবার আশ্রয়েই আছেন আফরোজা। মাধ্যমিক পাস করা আফরোজা এখন একটা চাকরি খুঁজছেন। যেন ছেলেকে নিয়ে নিজের মতো করে থাকতে পারেন।

আফরোজার পালিত বাবা আলমাস শেখ ইছাখাদা এলাকায় কাঠ চেরাই করা একটি করাতকলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এত দিন তাঁর আশ্রয়েই ছিলেন আফরোজা ও তাঁর ছেলে জুনায়েদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ। দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। এখন ওদের একটা আশ্রয় হলো। সরকারকে ধন্যবাদ। এখন মেয়েটার একটা চাকরি হলে নিশ্চিন্ত হই।’

মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন কবির বলেন, ‘আশ্রয়ণে ঘর পেতে যে যে শর্ত আছে, তার প্রতিটি এখানে বিদ্যমান। আফরোজার মতো মানুষেরই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তাঁর স্বামী ছিল এতিম ও ভূমিহীন, সে নিজেও পালিত মা–বাবার কাছে বড় হয়েছে। এখন ছেলেকে নিয়ে সে নিজের ঘরে থাকতে পারবে। স্বামী বেঁচে থাকলে তাঁদের সুখের সংসার হতো।’