ছেলের কোলে করে কেন্দ্রে এসে ভোট দিলেন ময়না রানী

ভোট দেওয়ার জন্য ময়না রানীকে কোলে করে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন ছেলে গোবিন্দ রায়। আজ রোববার রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে
ছবি: রহিদুল মিয়া

বয়সের ভারে ন্যুব্জ ময়না রানী (৬৪), হাঁটতে পারেন না। তবে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা আছে। মায়ের সেই ইচ্ছা পূরণ করতে কোলে করে ময়না রানীকে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন ছেলে গোবিন্দ রায়।

আজ রোববার তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কাড়িয়ারকুটি ইউপির কাশিয়াবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ দৃশ্য দেখা যায়।

ভোটকেন্দ্রের মাঠে কথা হয় ময়নার ছেলে গোবিন্দর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোট মানুষের স্বাধীন অধিকার। ভোট মানে হলো ভালো নেতা নির্বাচন করা। আমি নিজে ভোট দিয়েছি, মাকেও নিয়ে এসেছি ভোট দেওয়ার জন্য। সবাই নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি, এর চেয়ে খুশির আর কি আছে।’

শুধু ময়না রানীই নন, তারাগঞ্জ উপজেলায় চলমান ভোটে বয়সের ভারে ন্যুব্জ অনেকেই কেন্দ্রে এসেছেন স্বজনদের সহযোগিতায় ভোট দিতে। তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়ে হাসি মুখে ফিরেছেন ঘরে। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

বেলা ১১টায় দোহাজারী ভোটকেন্দ্রে নাতির বউ নাছিমা ও ছেলের বউ পারভিনার সঙ্গে ভোট দিতে আসেন জেলেখা বেগম (৭৫)। তিনি চলেন লাঠিতে ভর করে। বউদের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরে তিনি খুশি।

ভাঙা কণ্ঠে জেলেখা বেগম বলেন, ‘জীবনের আর কয়দিন। আবার ভোট দিতে পাব কি না, জানি না। এটাও আমার শেষ ভোট হতে পায়। তাই বউদের সঙ্গে ভোট দিতে এসেছি। বাহিনীর লোক ভোট দিতে সহযোগিতা করছে। এখন বাড়ি যাচ্ছি।’

ওই কেন্দ্রেই হুইলচেয়ারে বসে ভোট দিতে এসেছেন নবিন চন্দ্র (৮৫)। তাঁকে কেন্দ্রের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন আনসার সদস্য আবদুল হামিদ। আবদুল হামিদ জানান, সকাল থেকে এখানে সব বয়সের মানুষ ভোট দিতে আসছেন। আনন্দের সঙ্গে হাসি মুখে ভোট দিচ্ছেন। ঈদের মতো উৎসব চলছে। প্রার্থীরা এসে ঘুরে যাচ্ছেন, কোনো বিশৃঙ্খলা নেই।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ১১ হাজার ৮ জন। ৫টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণের জন্য ৪৯টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের জন্য আলমপুর ইউনিয়নে ৯টি কেন্দ্রে ৫৩টি বুথ, কুর্শা ইউনিয়নের ১০টি কেন্দ্রে ৬৩টি বুথ, ইকরচালী ইউনিয়নে ১০টি কেন্দ্রে ৬১টি বুথ, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নে ১১টি কেন্দ্রে ৬৯টি বুথ ও সয়ার ইউনিয়নে ৯টি কেন্দ্রের ৫৩ বুথে ভোট গ্রহণ চলছে।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫টি ইউনিয়নের ১৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। প্রার্থীরাও ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। কেন্দ্রগুলোর অদূরেই গড়ে উঠেছে অস্থায়ী চা ও পানের দোকান।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, সকাল আটটায় ভোট শুরু হয়। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলেছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন।