ছেলের খুনিদের বিচার চেয়ে রাস্তায় মা-বাবা

মাদ্রাসাছাত্র মামুন হাসান হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তাঁর মা-বাবাসহ এলাকাবাসী। শুক্রবার সকালে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সোহবারমোড়-চাঁচড়া সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় মুঠোফোন চোর সন্দেহে নির্যাতন করে মাদ্রাসাছাত্র মামুন হাসান (২২) হত্যার খুনিদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন তাঁর মা-বাবা। শুক্রবার সকালে মনিরামপুর উপজেলার সোহবারমোড়-চাঁচড়া সড়কে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে মা ছকিনা বেগম ও বাবা মশিয়ার গাজী ছেলের খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন।

বুধবার বিকেলে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাদ্রাসাছাত্র মামুন হাসান। এর আগে মঙ্গলবার রাতে হাত-পা বেঁধে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। নিহত মামুন হাসান মনিরামপুর উপজেলার খোজালিপুর গ্রামের মশিয়ার গাজীর ছেলে। তিনি মনিরামপুর আলিয়া মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু অংশ নেন। মানববন্ধনে মামুনের বোন লিমা খাতুনও অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী।

ছেলের খুনের বিচারের দাবিসংবলিত ফেস্টুন হাতে ধরে রাখেন মা ছকিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেরে ওরা ডেকে নিয়ে মেরে ফেলেছে। ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই।’ এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মামুন হাসানের বাবা মশিয়ার গাজী বলেন, ‘ওই রাতে আনিছুর মেম্বার উপস্থিত থেকে আমার ছেলেরে মারাইছে। মেম্বার বলেছে, সকাল হলি মামুনরে ইটভাটায় জ্বালিয়ে দেবে। মামুনের খুনিদের ফাঁসি চাই।’

মামুনের চাচা রোস্তম গাজী বলেন, তাঁদের রক্ত দিয়ে গোসল করানোর হুমকি দিচ্ছেন সিরাজ ও আনিছুর। তাঁদের এলাকাছাড়া করারও হুমকি দিচ্ছেন। মেম্বার আনিছুর, সিরাজ ও ফারুকের ফাঁসি চান তাঁরা।

মুঠোফোন চোর সন্দেহে নির্যাতনের শিকার হয়ে মামুন হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার রাতে তাঁর বাবা মশিয়ার গাজী বাদী হয়ে মনিরামপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে পাঁচ থেকে ছয়জনকে। পুলিশ বুধবার রাতে তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, রাতের খাবার খেয়ে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মামুন পাশে তাঁর খালা রেহেনা বেগমের দোকানে যান। তখন তাঁর বন্ধু আরমান তাঁকে ডেকে পাশে হরিহর নদের পাড়ে নিয়ে যান। সেখানে দল বেঁধে লোকজন এসে মামুনকে নদের পানিতে ফেলে মারধর করেন। এরপর গ্রামের আয়নালদের বাড়িতে নিয়ে হাত-পা বেঁধে তাঁকে ফের মারধর করা হয়। রাত তিনটা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা তাঁকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তাঁর মা সেখানে গিয়ে ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তাঁকে জানানো হয়, তাঁর ছেলে মোবাইল চুরি করেছে। পরদিন বুধবার সকালে সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে বেলা তিনটার দিকে মামুন মারা যান।