ছেলের চেয়ে মা ১০ মাসের আর বাবা ৪ বছরের বড়!

বাবা মোছলিম উদ্দীন (ডানে) ও মা মোছা. ছুরতন বেগমের সঙ্গে ছেলে মো. সোবহান
প্রথম আলো

ছেলের চেয়ে মা বড় মাত্র ১০ মাসের। আর বাবা বড় মাত্র ৪ বছরের। জাতীয় পরিচয়পত্রে (স্মার্ট কার্ড) উল্লিখিত জন্মতারিখ অনুযায়ী মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের বয়সের পার্থক্য এমন দাঁড়িয়েছে। এই ভুল সংশোধন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন, নানা কাগজপত্র জমা দেওয়ার বেড়াজালে পড়ে বয়স সংশোধনের কাজটাই হয়নি। বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিক সুবিধা থেকে।

এই তিনজন হলেন মোছলিম উদ্দীন, তাঁর স্ত্রী মোছা. ছুরতন বেগম ও তাঁদের বড় ছেলে মো. সোবহান। তাঁদের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বালাইট পূর্বপাড়া গ্রামে। মোছলিম উদ্দিন ভিক্ষাবৃত্তি করেন। স্ত্রীকে নিয়ে কালাই পৌরশহরের কলেজপাড়া মহল্লায় একটি  বাড়িতে থাকেন তিনি। তাঁদের পাশের বাড়িতে বড় ছেলে সোবহান থাকেন।

মোছলিম উদ্দীন ও ছুরতন দম্পতির চার ছেলে। বড় ছেলে সোবহান ভ্যানচালক। মোছলিমের স্মার্ট কার্ডে তাঁর জন্মতারিখ ২৮ অক্টোবর ১৯৫৯ লেখা আছে। ছুরতনের স্মার্ট কার্ডে তাঁর জম্মতারিখ ২৪ এপ্রিল ১৯৬২ লেখা। তাঁদের বড় ছেলে সোবহানের স্মার্ট কার্ডে জন্মতারিখ ১ জুন ১৯৬৩। তিনজনের জন্মতারিখ আর সাল লক্ষ করলেই অসংগতিটা চোখে পড়ে।

মোছলিম উদ্দীনের ভাষ্য, ‘হামার আসল বয়স ৭৫ বছরেরও বেশি। সরকার মোক কার্ড করে দিচে সেটি মোর বয়স কমে দিচে। কার্ডত বয়স কম থাকার জন্য মুই বয়স্কভাতার কার্ড পাইনি। আবার কার্ডত হামার বেটার বেশি দিচে।’

ছুরতন বেগম বলেন, ‘মুই চোখে ঠিকমতো দেখি না। ভাতার কার্ডত জন্নি মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গেছু। কার্ড দেখে বয়স হয়নি বলে হামাক ভাতার কার্ড করে দ্যাইনি। মোরা বয়স ঠিক করার জন্নি অফিসত গেছিনু, মোরকে বিয়্যার কাবিন চাওছে। একন মোরা বিয়্যার কাবিন কুতি পামু। তাই মোরক ফেরত দিচে।’

সোবহান বলেন, স্মার্টকার্ডে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর বয়সের পার্থক্য দেখে তিনি বিস্মিত।

প্রতিবেশী আবুল কালাম বলেন, ‘মোছলিম উদ্দীন খুবই গরিব মানুষ। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। স্মার্টকার্ডে বয়স ভুল থাকায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুযোগ-সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। মা-বাবা ও ছেলের বয়সের এমন অদ্ভুত পার্থক্য দেখে নিজেই অবাক হয়েছি।’

এই বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যদি কারও জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ভুল থাকে, তাহলে তিনি বয়স সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাঁকে তাঁর সঠিক বয়স প্রমাণে জন্য বিয়ের কাবিননামাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া বয়স সংশোধন হবে না।