ছেলের সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় এক মা

অসহায় মা ও ভাই খুঁজে বেড়াচ্ছে কিশোর ভ্যানচালক আনিছকে। রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া মজমপুর এলাকায়
প্রথম আলো

ভ্যানের সামনে বসে আছেন মা দোলেনা খাতুন। চালকের আসনে ছেলে জহুরুল ইসলাম। ভ্যানের মালিক মো. আনিছ (১৫), যে দোলেনা খাতুনের ছোট ছেলে। এই ছেলে এক মাস ধরে নিখোঁজ। তাঁর কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না দোলেনা। ছেলের খোঁজে নিরুপায় হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

রোববার দুপুরে তাঁদের দেখা মেলে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর রেলগেট এলাকায়। ভ্যানের ওপর বসে থাকা দোলেনা খাতুন তখন কান্না করছিলেন। দুই হাতে ধরে ছিলেন ছেলের ছবি।

দোলেনা খাতুন কুষ্টিয়া মিরপুর পৌরসভার ১ নম্বর সুলতানপুর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁর ছোট ছেলে আনিছ ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালান। গত ২২ অক্টোবর সকাল আটটায় প্রতিদিনের মতো ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর ফিরে আসেনি। তার মুঠোফোনও ঘটনার দিন থেকে বন্ধ রয়েছে।

পরের দিন ২৩ অক্টোবর সকাল সাতটায় জানতে পারেন, আনিছের ভ্যানটি পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা উপজেলার বৃত্তিপাড়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়। ওই দিনই দোলেনা খাতুন ভেড়ামারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এক দিন, দুই দিন করে এক মাস পেরিয়ে গেছে। হারানো ছেলের কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না অসহায় মা। এরই মধ্যে এলাকার মণ্ডল মাতবরসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে গেছেন। থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে ধরনা দিয়েও ছেলের কোনো খোঁজ পাননি।

রোববার আদালতে মামলা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপের পর মামলা না করেই ফিরে যান। একই সময়ে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কার্যালয়ে যান। সেখানে ছেলের খোঁজ চেয়ে বাড়ি ফিরছেন।

মো. আনিছ

ছেলের জন্য পাগলপ্রায় দোলেনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শুনেছেন সিআইডিরা সব খুঁজে দিতে পারে। তাই সেখানে ছেলের সন্ধানে গিয়েছিলেন। এক মাস ছেলে না পেয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দোলেনা খাতুন বলেন, ছেলের কোনো শত্রু নেই। তবে বড় ছেলে জহুরুলের সঙ্গে এলাকার কয়েকজন যুবকের তিন মাস আগে একটু ঝামেলা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ঘটনার জন্য ছোট ছেলে আনিছকে অপহরণ করা হতে পারে। নিখোঁজের এক দিন পর ভ্যান পাওয়া যায়। এর থেকেই বোঝা যায় তাকে হয়তো কেউ নিয়ে গেছে।

জহুরুল ইসলাম বলেন, আনিছ রাগ করে থাকার মতো ছেলে না। হয়তো তাকে অপহরণের পর ভ্যান রেখে চলে গেছে। পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে খুঁজলে হয়তো পাওয়া যাবে।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, নিখোঁজের ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। দোলেনাদের বাড়িতে গিয়েও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।