ছেলের সামনে মাকে হত্যার দায়ে চারজনের যাবজ্জীবন

প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছেলের সামনে মাকে হত্যা মামলায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত, অনাদায়ে তাঁদের আরও ৬ মাস করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শফিউল আজম এই রায় দেন।

সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন জেলার কসবা উপজেলার জগন্নাথপুর পূর্বপাড়া গ্রামের আল আমিন, মো. জান্নাত, সোহেল পাঠান ও কসবার ব্রাহ্মণমোড়া গ্রামের মো. ইব্রাহীম। তাঁদের মধ্যে জান্নাত ও সোহেল পলাতক। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আল আমিন ও ইব্রাহীম।

মামলার নথি ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কসবা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের শাহ আলমের সঙ্গে ৩০ বছর আগে একই গ্রামের রেজিয়া বেগমের (৪০) বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে তাঁদের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িতে মুরগি চুরির ঘটনা ঘটে। এতে আল আমিন, জান্নাত, সোহেল ও ইব্রাহীম জড়িত বলে রেজিয়া প্রকাশ্যে বলাবলি করেন। এর জেরে একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে শাহ আলমের বসতঘরে সিঁধ কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন আল আমিন, জান্নাত, সোহেল, ইব্রাহীমসহ অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজন। এ সময় হাত-পা বেঁধে খাট থেকে নিচে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রেজিয়ার গলা কেটে হত্যা করেন তাঁরা। এই দৃশ্য দেখে রেজিয়ার কিশোর ছেলে মাসুক ভূঁইয়া চিৎকার শুরু করে। পরে তাঁরা মাসুককে মারধর করেন। একপর্যায়ে মাসুক আরও চিৎকার শুরু করলে তাঁরা পালিয়ে যান। হত্যাকাণ্ডের পরদিন রেজিয়ার ভাই আবুল খায়ের বাদী হয়ে কসবা থানায় মামলা করনে। মামলার পরপরই পুলিশ আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আল আমিন দোষ স্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বাকি তিনজন আসামির নাম জানান।

একপর্যায়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দায়িত্ব পায়। সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। বুধবার বিকেলে চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জন্নাথপুর পূর্বপাড়া গ্রামের সুরন মিয়া, ব্রাহ্মণমোড়ার রুহুল আমিন, জগন্নাথপুর পূর্বপাড়ার বাচ্চু মিয়া, আখাউড়ার নোয়ামোড়ার বাবুল চৌধুরীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

সরকারি কৌঁসুলি দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘এই আদেশের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আদালতের আদেশে আমরা সন্তুষ্ট।’ তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’