ছোটদের ঝগড়া থেকেই শিশুটিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন আরেক শিশুর মা

প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে একটি অটোরিকশার গ্যারেজ থেকে গত সোমবার রাত নয়টায় মুখে স্কচটেপ মোড়ানো অবস্থায় এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই শিশুর নাম আমির হামজা (৩)। এ ঘটনায় নিহত শিশুটির চাচাতো বোন রোজি বেগম (২৩) ও তাঁর ভাই জুনাইদ আহমদ (২০) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রোজির শিশুসন্তানের সঙ্গে ওই শিশুর প্রায়ই ঝগড়া লাগত বলে রোজি বেগম ঘরে ডেকে এনে বালিশ চাপা দিয়ে শিশুটিকে হত্যা করেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নবীগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রশীদের পাশের ঘরে বসবাস করতেন তাঁর ভাতিজি রোজি বেগম। স্বামীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। রোজির তিন বছর বয়সী এক শিশুকন্যা রয়েছে। এ শিশুর সঙ্গে আবদুর রশিদের একই বয়সের শিশুপুত্র আমির হামজার প্রায় সময়ই ঝগড়া লেগে থাকত। এ ঝগড়াকে ঘিরে বড়দের মধ্যেও ঝগড়াঝাঁটি হতো। এ নিয়ে রোজি বেগম ক্ষুব্ধ ছিলেন শিশু আমির হামজার ওপর। গত সোমবার সন্ধ্যায় তিনি আমির হামজাকে তাঁর ঘরের ভেতরে ডেকে নিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। এ দৃশ্য দেখে ফেলেন তাঁর ছোট ভাই জুনাইদ আহমদ। পরে তিনি উত্তেজনার বশে কাজটি করে ফেলেছেন বলে তাঁর ভাইকে জানিয়ে লাশটি গুম করতে তাঁর সহযোগিতা চান। একপর্যায়ে ভাইবোন মিলে শিশু আমির হামজার লাশ তাঁদের বাড়ির ভেতরে অবস্থিত একটি অটোরিকশার গ্যারেজে লুকিয়ে রাখেন।

১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রোজি বেগম বলেন, তাঁর তিন বছরের কন্যাসন্তানকে আমির হামজা প্রায় সময় মারধর করত। যে কারণে তিনি বিরক্ত হয়ে আমির হামজাকে বালিশ চাপা দিয়ে নিজের ঘরে হত্যা করেন। এ সময় তাঁর ভাই জুনাইদ ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাঁর সহযোগিতায় লাশ গুম করার চেষ্টা করেন।

এদিকে শিশুটিকে না পেয়ে তার বাড়ির লোকজন সর্বত্র খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে বাড়ির অটোরিকশা গ্যারেজে গিয়ে দেখে, শিশুটি মাটিতে শুয়ে আছে। তার মুখে স্কচটেপ মোড়ানো। সেখান থেকে দ্রুত উদ্ধার করে তারা নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া রোজি বেগম ও তাঁর ভাই গতকাল বুধবার হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা বেগমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে রোজি বেগম বলেন, তাঁর তিন বছরের কন্যাসন্তানকে আমির হামজা প্রায় সময় মারধর করত। যে কারণে তিনি বিরক্ত হয়ে আমির হামজাকে বালিশ চাপা দিয়ে নিজের ঘরে হত্যা করেন। এ সময় তাঁর ভাই জুনাইদ ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাঁর সহযোগিতায় লাশ গুম করার চেষ্টা করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে রোজি ও জুনাইদ দুজনই জড়িত। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা আবদুর রশিদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। আসামিরা বর্তমানে আদালতের নির্দেশে হবিগঞ্জ কারাগারে আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পারভেজ আলম চৌধুরী, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান প্রমুখ।