ছয় মাস পর আবার মঞ্চে পা

সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে মিলনায়তনে আসনবিন্যাস করা হয়। মাস্ক পরা ছিল বাধ্যতামূলক।

সিলেটে ছয় মাস পর ফের সংস্কৃতিকর্মীরা মঞ্চে পরিবেশনায় অংশ নিলেন। রোববার সন্ধ্যায় নগরের রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটরিয়ামে
প্রথম আলো

দীর্ঘ ছয় মাস পর আবার মঞ্চে পা পড়ল সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের। গান-নাচ, আবৃত্তি, নাটক পরিবেশন করে তাঁরা আবার জমিয়ে দিলেন মঞ্চ। আলো-অন্ধকারে সংস্কৃতিকর্মীরা তৈরি করলেন এক মায়াজাল। মঞ্চের লাল-নীল-সাদা আলোয় সৃষ্ট সেই মায়ায় আটকা পড়লেন দর্শকেরা।

করোনাভাইরাসের কারণে সিলেটে এত দিন সব ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন বন্ধ ছিল। তাই গতকাল রোববারের এ আয়োজন ঘিরে সংস্কৃতি-অনুরাগীদের মধ্যে ছিল উত্তেজনা।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। এর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে দর্শনার্থীরা একে একে আসতে থাকেন অনুষ্ঠানস্থল নগরের রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটরিয়ামে। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চের পর থেকে সিলেটে সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। দীর্ঘ এ বিরতির পর গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবেশনার উদ্দেশ্যে প্রথম মঞ্চে উঠলেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা।

মঞ্চে সংস্কৃতিকর্মীদের পরিবেশনা। রোববার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটরিয়ামে।
প্রথম আলো

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে মিলনায়তনে আসনবিন্যাস করা হয়েছিল। দর্শনার্থীদের জন্য মাস্ক পরা ছিল বাধ্যতামূলক। এমনকি মিলনায়তনের প্রবেশের আগে সব দর্শনার্থীর তাপমাত্রা পরীক্ষা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া হয়। বাড়তি এ সতর্কতায় দর্শনার্থীরাও ছিলেন সন্তুষ্ট। পরে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

উদ্বোধনী পর্বে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, আয়োজক সংগঠনের সাবেক প্রধান পরিচালক নিজামউদ্দিন লস্কর ও বর্তমান প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত, সংগীতশিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, বাউল আবদুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে নৃত্যশৈলী সিলেটের সদস্যরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর আবৃত্তি করেন মোকাদ্দেস বাবুল। পরে গীতবিতান বাংলাদেশের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। সবশেষে ছিল তিনটি মঞ্চনাটকের অংশবিশেষের পরিবেশনা। এ তিনটি নাটক হলো বিদ্যুৎ কর রচিত ও আফজাল হোসেন নির্দেশিত সুরমা কান্দে, সৈয়দ শামসুল হক রচনা ও অরিন্দম দত্তের নির্দেশনায় নূরলদীনের সারাজীবন এবং উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ার রচিত ও নিজামউদ্দিন লস্কর নির্দেশিত দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটক।

সভায় বক্তারা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সিলেটের মঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়নি। তবে এ সময়ে সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনার কারণে বিপাকে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানবিক দায়বোধ থেকেই খাদ্যসহায়তা করেছেন তাঁরা। এখন সীমিত পরিসরে তাঁরা পুনরায় মঞ্চে এসেছেন মানুষের জয়গান গাইতে।